Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

জি-২০ নেতৃত্বের ভার্চুয়াল শিখর বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর প্রারম্ভিক ভাষণ (২২ নভেম্বর, ২০২৩)

জি-২০ নেতৃত্বের ভার্চুয়াল শিখর বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর প্রারম্ভিক ভাষণ (২২ নভেম্বর, ২০২৩)


নয়াদিল্লি, ২২ নভেম্বর, ২০২৩

 

মহামহিম,
সুধীবৃন্দ
নমস্কার!
 
আমার আমন্ত্রণ গ্রহণ করে আজকের এই শিখর বৈঠকে যোগদানের জন্য আমি আপনাদের সকলকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ১৪০ কোটি ভারতবাসীর তরফ থেকে আপনাদের সকলকে হার্দিক শুভেচ্ছা জানাই। 
বন্ধুগণ, আমার বন্ধু ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি জোকো উইডোডো গত বছর ১৬ ই নভেম্বর আমার হাতে যখন আনুষ্ঠানিক হাতুড়ি তুলে দিলেন সেই সময়টা দৃশ্যতই আমার স্মরণে রয়েছে। সেই সময় আমি বলেছিলাম, আমরা সকলে মিলে জি-২০-কে অন্তর্ভুক্তিমূলক, উচ্চাকাঙ্খী, কর্মনিবিড় এবং সিদ্ধান্তমূলক মঞ্চ হিসেবে গড়ে তুলব। পুরো গত বছর জুড়ে আমরা সেই লক্ষ্যকে বাস্তবায়িত করেছি। আমরা সম্মিলিতভাবে জি-২০-কে এক নতুন শিখরে পৌঁছে দিয়েছি। 
সারা বিশ্বজুড়ে অবিশ্বাস এবং চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের বোধ আমাদের এক সূত্রে বেঁধেছে।
এই এক বছরে আমরা “এক বিশ্ব এক পরিবার এক ভবিষ্যৎ” এই ভাবধারায় বিশ্বাসী হয়েছি, এবং আমরা প্রমাণ করেছি যাবতীয় বিতর্কের উর্ধে ঐক্য ও সমন্বয়ই পথ দেখাতে পারে। 
সেই মুহুর্তের কথা আমি কখনওই ভুলব না, যখন দিল্লিতে আমরা সর্বতসম্মতিক্রমে আফ্রিকান ইউনিয়নকে জি-২০-তে আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করলাম।
অন্তর্ভুক্তিকরণের এই অবিসংবাদী বার্তা জি-২০ সারা বিশ্বকে দিয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে গর্বের বিষয় যে ভারত এবং আফ্রিকা তাদের সভাপতিত্বকালে নিজেদের উপস্থিতিকে জানান দিতে পেরেছে।
এই এক বছরে সমগ্র বিশ্ব জি-২০-তে গ্লোবাল সাউথের প্রতিধ্বনি শুনেছে। 
গত সপ্তাহে গ্লোবাল সাউথ শিখর বৈঠকে যে কণ্ঠ ধ্বনিত হয়েছে তাতে নতুন দিল্লিতে জি-২০ শিখর বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তকে প্রায় ১৩০ টি দেশ প্রশংসা করেছে। 
উদ্ভাবন এবং ডিজিটাল প্রযুক্তিকে সমর্থনের পাশাপাশি মানব-কেন্দ্রিক অভিমুখ গ্রহণে জি-২০ জোর দিয়েছে। বহুপাক্ষিকতায় জি-২০ পুনরায় তার বিশ্বাস ন্যস্ত করেছে। 
আমরা সম্মিলিতভাবে বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাঙ্ক এবং বৈশ্বিক প্রশাসনিক সংস্কারে দিশা দেখিয়েছি। 
এই সবের সঙ্গে ভারত তার সভাপতিত্বকালে জি-২০-কে পিপলস-২০-তে পরিচিতি দিয়েছে। ভারতের কোটি কোটি সাধারণ মানুষ জি-২০-তে যোগ দিয়েছেন এবং একে এক উৎসব হিসেবে উদযাপন করেছেন। 
মহামহিম, 
সুধীবৃন্দ,
 আমি যখন ভার্চুয়াল শিখর বৈঠকের প্রস্তাব দিই, তখন বৈশ্বিক পরিস্থিতি আজ কি দাঁড়াবে তার কোনো পূর্বাভাস ছিল না। সাম্প্রতিক বছরগুলি আমাদেরকে নতুন চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করিয়েছে। পশ্চিম এশিয়ার অস্থিরতা এবং নিরাপত্তাহীনতা আমাদের সকলের কাছে এক উদ্বেগের বিষয়। আমাদের সকলের আজ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার মধ্যে দিয়ে প্রমাণিত হয় যে এসব বিষয়ে আমরা অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং যৌথভাবেই আমরা তার সমাধান করতে পারি।
বস্তুত আমাদের সকলেরই বিশ্বাস যে সন্ত্রাসবাদ কারোর কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়। নাগরিকের মৃত্যু তা সে যেখানেই হোক নিন্দনীয়। 
পণবন্দিদের আজ মুক্তি দেওয়ার খবরকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি এবং আশা করব যে সমস্ত পণবন্দিদেরই দ্রুত মুক্তি দেওয়া হবে। সময় বেঁধে মানবিক সাহায্য নিয়মিত পৌঁছনো অত্যন্ত আবশ্যক। ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে সংঘর্ষ কোনোভাবেই যাতে আঞ্চলিক সংঘর্ষে পরিণত না হয় তা নিশ্চিত করা দরকার। 
সংকটের ধুম্র মেঘ যখন আমরা প্রত্যক্ষ করছি, তখন এক পরিবার হিসেবে আমাদের সকলের দায়িত্ব শান্তির লক্ষ্য অর্জনে আমরা সম্মিলিত হই। 
    মানব কল্যাণের কেন্দ্রবিন্দু থেকে সন্ত্রাস ও হিংসার বিরুদ্ধে এবং মানবতার পক্ষে জোরালো কণ্ঠ আমাদেরকে তুলে ধরতে হবে।
বিশ্বের এবং মানবতার প্রত্যাশা পূরণে ভারত কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এক যোগে কাজ করতে প্রস্তুত।
বন্ধুগণ, 
একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বে গ্লোবাল সাউথের বিষয়সমূহকে আমাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে তার এগিয়ে চলার স্বার্থেই।
গ্লোবাল সাউথের দেশসমূহ এমন অনেক সমস্যার মধ্যে দিয়ে চলেছে যার জন্য আদৌ তারা কোনোভাবে দায়ী নয়।
এই প্রেক্ষিতে সময়ের প্রয়োজন হল উন্নয়নমূলক বিষয়সমূহকে আমাদের পূর্ণ সমর্থন জানানো।
এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, বিশ্ব অর্থনীতি এবং পরিচালন কাঠামোকে আরও বৃহদায়তন, উন্নত, দক্ষ, প্রতিনিধিত্বমূলক এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে তার সংস্কারসাধন অত্যন্ত জরুরী। 
    কোনও দেশের প্রয়োজনের মূহুর্তে তাদের সময়মাফিক এবং মূল্যসাশ্রয়ী সহায়তাপ্রদান    অত্যন্ত জরুরী। ২০৩০-এ সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্য সম্পাদনকে জোরালো করতে যে সমস্ত কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে, তা রূপায়ন করা জরুরী। 
বন্ধুগণ, 
আমাদের উচ্চাকাঙ্খী জেলা কর্মসূচি ভারতে স্থানীয় স্তরে সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যপূরণে এক জাজ্বল্যমান দৃষ্টান্ত স্বরূপ। আমি জি-২০ দেশগুলো এবং গ্লোবাল সাউথকে আমন্ত্রণ জানাবো এই উচ্চাকাঙ্খী জেলা কর্মসূচি ভারতের ২৫ কোটি মানুষের জীবনে 
যে রূপান্তরমূলক প্রভাব ফেলেছে তা প্রত্যক্ষ করতে। 

বন্ধুগণ, 
নতুন দিল্লি শিখর বৈঠকে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছিল ডিজিটাল জনপরিকাঠামো আধার গড়ে তোলার। এর কাজ সম্পূর্ণ বলে আমি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি। ১৬টি দেশ থেকে ৫০ টিরও বেশি ডিপিআই এই আধারে যুক্ত করা হয়েছে। গ্লোবাল সাউথের দেশগুলিতে ডিপিআই-এর রূপায়ণকে জোর দিতে আমি একটি সামাজিক প্রভাব তহবিল গড়ে তোলার প্রস্তাব করছি। এই লক্ষ্যে আমি ভারতের তরফ থেকে এই তহবিলে ২ কোটি ৫০ লক্ষ ডলার দেওয়ার প্রস্তাব করছি এবং আশা করব যে আপনারাও এই উদ্যোগে সামিল হবেন।  
    কৃত্রিম মেধার এই পর্বে প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেক বেশি দায়িত্বশীল হওয়া দরকার। সারা বিশ্ব জুড়ে কৃত্রিম মেধার নেতিবাচক ব্যবহার উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
    ভারত দৃঢ়তার সঙ্গে বিশ্বাস করে যে কৃত্রিম মেধার বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রণে আমাদের একযোগে কাজ করা দরকার।
    সমাজ এবং ব্যক্তির জীবনে ডিপফেক যে কতখানি ভয়ঙ্কর তার গুরুত্ব বুঝে আমাদের সকলকে একযোগে এগোতে হবে। 
    আমরা চাই মানুষের কাছে কৃত্রিম মেধা পৌঁছোক, তবে সমাজের কাছে তাকে হতে হবে নিরাপদ। 
    এই অভিমুখকে সামনে রেখে আগামী মাসে ভারতে বিশ্ব কৃত্রিম মেধা সহযোগিতা শিখর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। আমি বিশ্বাস করি আপনারা সকলেই এতে সহায়তা করবেন। 
বন্ধুগণ,
নতুন দিল্লি শিখর সম্মেলনে পরিবেশ রক্ষার লক্ষ্যে আমি গ্রীণ ক্রেডিট কার্ডের কথা বলেছিলাম। 
আপনারা জেনে খুশী হবেন যে, ভারতের নতুন দিল্লিতে আমরা বিশ্ব জৈব জ্বালানি জোটের অধীন এটা চালু করেছি। আমরা কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমিয়ে আনছি এবং এর পাশাপাশি বিকল্প জ্বালানির উন্নয়ন ও প্রসারেরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
জি-২০ মিশন লাইফকে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা হল পরিবেশের জন্য জীবনশৈলী। এটা ধরিত্রীবান্ধব ব্যবস্থা। ২০৩০ সালের মধ্যে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি তিন গুণ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যকে সামনে রাখা হয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় বিনিয়োগকে বিলিয়ন থেকে ট্রিলিয়নে পৌঁছতে স্বচ্ছ্ব হাইড্রোজেনের প্রতি দায়বদ্ধতা রক্ষায় এটা পথ দেখাবে।
    কিছুদিনের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে কপ-২৮-এ অনুষ্ঠান পর্বে এই সব লক্ষ্যপূরণ গঠনমূলক উদ্যোগ নেওয়া দরকার।  
 বন্ধুগণ, 
মহিলা সশক্তিকরণে একটি নতুন কর্মিগোষ্ঠী গঠন করা হয়েছে। 
এই প্রেক্ষিতে আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, নতুন সংসদ ভবনের প্রথম অধিবেশনে ভারত এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 
    মহিলাচালিত উন্নয়নকে শক্তি জোগাতে সংসদ এবং বিধানসভাগুলিতে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বন্ধুগণ,
আমি আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি।  

প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণ হিন্দিতে

PG/AB/SG/