Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

উত্তর প্রদেশের বারাণসীতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের শিলান্যাস করলেন প্রধানমন্ত্রী

উত্তর প্রদেশের বারাণসীতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের শিলান্যাস করলেন  প্রধানমন্ত্রী


নয়াদিল্লি,  ২৩  সেপ্টেম্বর, ২০২৩

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ বারাণসীতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের শিলান্যাস করেছেন। ৩০ একরেরও বেশি জায়গা নিয়ে প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বারাণসীর রাজাতালাব-এর গঞ্জারিতে এই স্টেডিয়ামটি গড়ে উঠবে। 

সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই উপলক্ষে আরও একবার বারাণসীতে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে তিনি আনন্দিত। এই শহরে আসবার আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা যায় না বলে তিনি মন্তব্য করেন। গত মাসের ২৩ তারিখ চাঁদের শিবশক্তি পয়েন্টে চন্দ্রযানের অবতরণের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার ঠিক একমাস পরে তিনি কাশীতে এলেন। তিনি বলেন, “শিবশক্তির একটি স্থান চাঁদে অন্যটি এখানে কাশীতে”। এই অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য তিনি সবাইকে অভিনন্দন জানান। 

যে স্থানে স্টেডিয়ামটি গড়ে উঠছে তার গুরুত্ব উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি মাতা বিন্ধ্যবাসিনীতে যাওয়ার পথের সংযোগস্থলে পড়ে, আবার এর খুব কাছেই রয়েছে মতিকোট গ্রাম, যেখানে রাজ নারায়ণ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নকশা দেবাদিদেব মহাদেবকে উৎসর্গ করা হয়েছে। এর ফলে কাশীর নাগরিকরা গর্বিত বোধ করছেন। এই স্টেডিয়াম দুর্দান্ত ক্রিকেট ম্যাচের সাক্ষী হবে এবং তরুণ ক্রীড়াবিদরা আন্তর্জাতিক মানের এই স্টেডিয়ামে প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবেন। কাশীর নাগরিকরা এর থেকে ব্যাপকভাবে উপকৃত হবেন বলে তিনি মন্তব্য করেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্রিকেটের মাধ্যমে সারা বিশ্ব ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে। অনেক নতুন দেশ এখন ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছে, যার ফলে ম্যাচের সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। এর জেরে স্টেডিয়ামের চাহিদাও বেড়ে চলেছে। এই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামটি ভবিষ্যতে সেই চাহিদা পূরণ করবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশাপ্রকাশ করেন। বিসিসিআই-কে তাদের অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ জানান। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মাপের ক্রীড়া পরিকাঠামোর উন্নয়ন শুধু খেলাধুলাতেই ইতিবাচক প্রভাব ফেলে না, আঞ্চলিক অর্থনীতির বিকাশেও সহায়ক হয়। এর সুবাদে অনেক বেশি দর্শক আসেন যার থেকে এই অঞ্চলের হোটেল, খাবারের দোকান, রিক্সা ও অটোচালক এবং মাঝি-মাল্লারাও উপকৃত হন। এটি ক্রীড়া প্রশিক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার ওপরেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, তরুণ-তরুণীরা খেলাখুলা সংক্রান্ত স্টার্টআপ গড়ে তুলতে উৎসাহিত হন। এর জেরে ফিজিওথেরাপি কোর্সগুলিরও বিকাশ ঘটে। আগামীদিনে বারাণসীতে এক নতুন ক্রীড়া শিল্প গড়ে উঠবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশাপ্রকাশ করেন। 

খেলাধুলার প্রতি অভিভাবকদের মানসিকতার পরিবর্তনের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন দেশের সবাই ভাবতে শিখেছেন- “যে খেলাধুলা করবে তারই উন্নতি হবে”। এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সাম্প্রতিক শাহদল সফর এবং সেখানকার একটি আদিবাসী গ্রামের যুবকদের সঙ্গে তাঁর আলাপচারিতার কথা বলেন। সেখানে ফুটবলের প্রতি গভীর ভালোবাসা এবং “মিনি ব্রাজিল” গড়ে ওঠার বর্ণনাও দেন তিনি। 

খেলাধুলার প্রতি কাশীর দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তনের কথাও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসে। তিনি বলেন, কাশীর যুব সমাজ যাতে খেলাধুলার ক্ষেত্রে বিশ্বস্তরের সুযোগ-সুবিধা পায় সেজন্য এই স্টেডিয়াম গড়ে তোলা হচ্ছে। এছাড়া সিগরা স্টেডিয়ামেও ৫০টিরও বেশি খেলাধুলার সুযোগ-সুবিধা গড়ে তুলতে ৪০০ কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে। এটিই প্রথম মাল্টি স্পোর্টস কমপ্লেক্স হবে, যা দিব্যাঙ্গ-বান্ধব। নতুন নির্মাণের পাশাপাশি পুরনো ব্যবস্থাগুলিরও উন্নতিসাধন করা হচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেলাধুলায় ভারতের সাম্প্রতিক সাফল্য এসেছে দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তনের জন্য। খেলাধুলাকে এখন শারীরিক সক্ষমতা, কর্মসংস্থান ও জীবিকার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। ৯ বছর আগের তুলনায় এ বছরের ক্রীড়া বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে ৩ গুণ। গত বছরের তুলনায় এই বছরে খেলো ইন্ডিয়ার বাজেট প্রায় ৭০ শতাংশ বেড়েছে। স্কুল স্তর থেকে অলিম্পিকের মঞ্চ পর্যন্ত সরকার এখন দলের এক সদস্যের মতো ক্রীড়াবিদদের পাশে থাকে বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন। এই প্রসঙ্গে খেলাধুলোয় মেয়েদের আরও বেশি করে অংশগ্রহণ এবং টপস প্রকল্পের উল্লেখও করেন তিনি। 

ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি গেমস-এর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত এই প্রতিযোগিতায় এ বছরে যতগুলি পদক পেয়েছে, আগের সবকটি বছর জুড়েও পদক সংখ্যা তার সমান হবে না। আসন্ন এশিয়ান গেমস-এ যেসব ক্রীড়াবিদ অংশ নেবেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁদের শুভেচ্ছা জানান। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রতিটি গ্রাম ও শহরের কোণে কোণে ক্রীড়া প্রতিভা ছড়িয়ে আছে। খুঁজে বের করে তাঁদের দক্ষতার বিকাশের ওপর জোর দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছোট শহর ও গ্রাম থেকে আসা তরুণ-তরুণীরা আজ জাতির গর্ব হয়ে উঠছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের জন্য আরও বেশি সুযোগ তৈরির ওপর জোর দেন। খেলো ইন্ডিয়ার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এখানে স্থানীয় প্রতিভা চিহ্নিত করে সরকার তাঁদের আন্তর্জাতিক স্তরের ক্রীড়াবিদে পরিণত করার চেষ্টা করে। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতির জন্য প্রধানমন্ত্রী তাঁদের ধন্যবাদ জানান। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের খ্যাতনামা ক্রীড়াবিদদের প্রশিক্ষক হতে সরকার উৎসাহ দিচ্ছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন প্রতিভার বিকাশে উন্নত প্রশিক্ষণ ও ভালো প্রশিক্ষক সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন পরিকাঠামো ছোট শহর ও গ্রামের ক্রীড়াবিদদের সামনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে। খেলো ইন্ডিয়ার আওতায় যে পরিকাঠামো তৈরি হয়েছে, তাতে মেয়েরা উপকৃত হচ্ছে বলে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। 

প্রধানমন্ত্রী জানান, নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতে খেলাখুলাকে পাঠ্যক্রম বহির্ভুত কার্যকলাপের পরিবর্তে একটি স্বতন্ত্র বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। মণিপুরে দেশের প্রথম জাতীয় ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। উত্তর প্রদেশেও ক্রীড়া পরিকাঠামোর উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে তিনি গোরক্ষপুরে একটি স্পোর্টস কলেজের সম্প্রসারণ এবং মিরাট-এ মেজর ধ্যানচাঁদ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উল্লেখ করেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির উন্নয়নে ক্রীড়া পরিকাঠামোর সম্প্রসারণ একান্ত আবশ্যক। বিশ্বের বেশ কিছু শহর আন্তর্জাতিক স্তরে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য পরিচিত। ভারতেও বিশ্বমানের এমন আয়োজনের উপযুক্ত ক্রীড়া পরিকাঠামো গড়ে তোলার ওপর তিনি জোর দেন। এই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম নিছক ইঁট ও কংক্রিটের কাঠামো না হয়ে থেকে ভারতের ভবিষ্যৎ প্রতীক হয়ে উঠবে বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন। 

শহরে যেসব উন্নয়নমুখী প্রয়াস চলছে তার জন্য কাশীর মানুষকে কৃতিত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনাদের ছাড়া কাশীতে কোনোকিছু করাই সম্ভব নয়। আপনাদের সমর্থন ও আশীর্বাদে আমরা কাশীর উন্নয়নের নতুন অধ্যায় লিখতে থাকবো”। 

উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, বিসিসিআই সভাপতি রজার বিনি, বিসিসিআই-এর সহ সভাপতি রাজীব শুক্লা, বিসিসিআই সচিব জয় শাহ, প্রাক্তন তারকা ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কার, শচীন তেন্ডুলকর, কপিল দেব, রবি শাস্ত্রী, দিলীপ বেঙ্গসরগার মদনলাল, গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ, গোপাল শর্মা প্রমুখ এবং উত্তর প্রদেশ সরকারের মন্ত্রীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। 

AC/SD/NS…