Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

প্রধানমন্ত্রী গুজরাটের গান্ধীনগরে ২০২৩ – এর সেমিকন ইন্ডিয়ার উদ্বোধন করেছেন

প্রধানমন্ত্রী গুজরাটের গান্ধীনগরে ২০২৩ – এর সেমিকন ইন্ডিয়ার উদ্বোধন করেছেন

প্রধানমন্ত্রী গুজরাটের গান্ধীনগরে ২০২৩ – এর সেমিকন ইন্ডিয়ার উদ্বোধন করেছেন


“এক বছরের মধ্যে ‘ভারতে কেন বিনিয়োগ করবো’ এই প্রশ্নের পরিবর্তে ‘ভারতে বিনিয়োগ কেন করবো না’ প্রশ্নটি করা হচ্ছে”

“যাঁরা ভারতের ক্ষমতায় তাঁদের স্বপ্ন পূরণে আগ্রহী, ভারত তাঁদের নিরাশ করে না”

“গণতন্ত্র, জনবিন্যাস ও লভ্যাংশ ভারতে ব্যবসাকে দ্বিগুণ এবং তিনগুণ করে তোলে”

“স্বাস্থ্য, কৃষি অথবা পণ্য পরিবহণ – প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারত উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্যোগী হয়েছে”

“বিশ্বের একটি ভরসাযোগ্য সরবরাহ-শৃঙ্খলের প্রয়োজন; বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের থেকে কে বেশি আস্থাশীল অংশীদার হয়ে উঠতে পারে”

“সেমিকন্ডাক্টর বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভারত আদর্শ কন্ডাক্টর বা স্থান হয়ে উঠছে”

“ভারত আন্তর্জাতিক স্তরে তার দায়বদ্ধতা উপলব্ধি করতে পারে এবং এই কারণে বন্ধুভাবাপন্ন রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে মিলিতভাবে একটি সর্বাঙ্গীন পরিকল্পনা করছে”

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ গুজরাটের গান্ধীনগরে মহাত্মা গান্ধী মন্দিরে ২০২৩ – এর সেমিকন ইন্ডিয়ার উদ্বোধন করেছেন। এই সম্মেলনের মূল ভাবনা ‘ভারতের সেমিকন্ডাক্টর সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনায় অনুঘটকের কাজ করা’। এই অনুষ্ঠানে ভারতের সেমিকন্ডাক্টর ক্ষেত্রে গৃহীত কৌশল ও নীতি প্রতিফলিত হয়েছে, যেখানে সেমিকন্ডাক্টরের নকশা তৈরি, উৎপাদন ও প্রযুক্তির মানোন্নয়নে দেশ আন্তর্জাতিক কেন্দ্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখে।

এই উপলক্ষে শিল্প সংস্থাগুলির নেতৃবৃন্দ তাঁদের মতামত জানিয়েছেন। সেমির সভাপতি এবং মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক শ্রী অজিত মিনোচা বলেছেন, ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম ভূ-রাজনীতি, অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং বেসরকারি সংস্থাগুলির নিজস্ব দক্ষতা একজোট হয়েছে। এর ফলে, ভারতের সামনে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে অগ্রণী দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, মাইক্রন বিনিয়োগ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নতুন এক ইতিহাস রচনা করবে। আগামী দিনে অন্যান্য সংস্থাগুলিও এই পথ অনুসরণ করবে। শিল্প সংস্থাগুলির নেতৃবৃন্দকে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনের পরিবেশ সম্পর্কে উপলব্ধি করতে হবে, যা বর্তমান ব্যবস্থার থেকে আলাদা। এশিয়া মহাদেশে সেমিকন্ডাক্টরের চালিকাশক্তি হয়ে উঠবে ভারত।

এএমডি-র ইভিপি এবং সিটিও শ্রী মার্ক পেপারমাস্টার সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি ঘোষণা করেন, “আগামী পাঁচ বছরে তাঁর সংস্থা ভারতে ৪০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে। এএমডি তার গবেষণা ও উদ্ভাবন শাখার মানোন্নয়ন ঘটাবে। “আমরা বেঙ্গালুরুতে আমাদের নকশা তৈরির বৃহত্তম কেন্দ্র গড়ে তুলবো”।

সেমিকন্ডাক্টর প্রোডাক্ট গ্রুপ অ্যাপলায়েড মেটেরিয়ালস্ – এর সভাপতি ডঃ প্রভু রাজা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গীর কারণেই আন্তর্জাতিক স্তরে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে ভারত প্রধান ভূমিকা পালন করতে চলেছে। “আমরা বিশ্বাস করি যে, ভারতের এক্ষেত্রে নিজের দক্ষতা দেখানোর সময় এসেছে”। যে কোনও ক্ষেত্রে কোনও সংস্থা এককভাবে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারে না। যৌথভাবে কাজ করার মডেলের মাধ্যমে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। “সেমিকন্ডাক্টর সংক্রান্ত ভারতের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অংশীদার হিসেবে আমাদের নাম বিবেচনা করায় আপনাদের অনেক ধন্যবাদ”।

ক্যাডেন্সের সভাপতি ও মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক শ্রী অনিরুধ দেবগণ বলেন, সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে ভারতের বিনিয়োগ করার বিষয়টি দারুণ খবর। সরকার পুরো ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে অর্থ বিনিয়োগ করায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

বেদান্ত গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান শ্রী অনিল আগরওয়াল বলেছেন, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভারতের সিলিকন ভ্যালি হিসেবে বিনিয়োগ করার সঠিক জায়গা গুজরাট। দেশের যুবসম্প্রদায়ের জন্য নতুন নতুন সুযোগ তৈরি করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী যে পরিকল্পনা করেছেন, সেগুলি তিনি তুলে ধরেন। “গত দশকে ভারত কিভাবে নিজেকে পরিবর্তন করেছে, তা আমরা দেখেছি। ভারতীয় যুবসম্প্রদায়ের চাহিদা যথেষ্ট বেশি”।

মাইক্রন টেকনোলজির সভাপতি ও মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক শ্রী সঞ্জয় মেহরোত্রা ভারতকে একটি সেমিকন্ডাক্টর হাব হিসেবে গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী যে পরিকল্পনা করেছেন, তার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানান। সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের বিভিন্ন সরঞ্জামকে যুক্ত করা এবং সেগুলির পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর ক্ষেত্রে গুজরাটে তিনি যে সংস্থা গড়ে তোলেন, এই সম্মেলনে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন। এর ফলে, এই প্রকল্পে প্রায় ৫ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং আগামী দিনে আরও ১৫ হাজার অতিরিক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারগুলির ভূমিকার প্রশংসা করেছেন তিনি। তিনি উদ্ভাবনের পরিবেশ গড়ে তোলা, ব্যবসা – বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো এবং সামাজিক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তার প্রশংসাও করেছেন। “ডিজিটাল ইন্ডিয়া এবং মেক ইন ইন্ডিয়া একটি বৈপ্লবিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে, যার মাধ্যমে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে”।

ফক্সকন – এর চেয়ারম্যান শ্রী ইয়ং লিউ তাইওয়ানে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের লড়াকু মনোভাবের বিষয়টি তুলে ধরেন। এই শিল্পের কোনও অভিযোগ ছাড়াই কঠোর পরিশ্রম করার ক্ষমতা রয়েছে। ভারতেও এ ধরনের মানসিকতা গড়ে তোলা সম্ভব। বহু বছর আগে তাইওয়ান যা করেছিল, ভারতকেও সেই মানসিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে। ভারত সরকারের সেই ইচ্ছা ও অধ্যবসায় আছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। “আইটি-র অর্থ ভারত (ইন্ডিয়া) ও তাইওয়ান”। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্বৃত করে তিনি বলেন, তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে ভারতের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অংশীদার হয়ে উঠবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলের উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেমিকন – এর মতো একটি অনুষ্ঠান অনেকটা সফট্ওয়্যার-কে আপডেট করার মতো, যেখানে বিশেষজ্ঞ ও শিল্প-বাণিজ্য শাখার নেতৃবৃন্দ মিলিত হন এবং নিজেদের মতামত সকলের সঙ্গে ভাগ করে নেন।

“আমাদের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠান-স্থলে আয়োজিত প্রদর্শনীটি ঘুরে দেখেন এবং এই ক্ষেত্রের উদ্ভাবনী মানসিকতার প্রশংসা করেন। তিনি যুবসম্প্রদায় সহ সকলকে প্রদর্শনীটি ঘুরে দেখার আহ্বান জানান, যেখানে নতুন প্রযুক্তির ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা তৈরি হবে।

গত বছর সেমিকন – এর প্রথম আয়োজন সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা সময় ছিল, যখন ভারতে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে বিনিয়োগ কেন করা হবে সেই প্রশ্ন তোলা হ’ত। এক বছরের মধ্যে ‘ভারতে কেন বিনিয়োগ করবো’ এই প্রশ্নের পরিবর্তে ‘ভারতে বিনিয়োগ কেন করবো না’ প্রশ্নটি করা হচ্ছে। শিল্প-বাণিজ্য জগতের নেতৃবৃন্দের উদ্যোগের কারণেই এই পরিবর্তন হয়েছে। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তাঁদের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ভারতের ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত করতে পারেন। এর মধ্য দিয়ে তাঁদের স্বপ্ন পূরণ হবে। যাঁরা ভারতের ক্ষমতায় তাঁদের স্বপ্ন পূরণে আগ্রহী, ভারত তাঁদের নিরাশ করে না। একবিংশ শতাব্দীর ভারতে সুযোগের প্রাচুর্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণতন্ত্র, জনবিন্যাস ও লভ্যাংশ ভারতে ব্যবসা-বাণিজ্যকে দ্বিগুণ এবং তিনগুণ করে তোলে।

দ্রুত হারে উন্নয়ন সংক্রান্ত ‘মুর’ – এর সূত্রের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, আমরা ভারতে ডিজিটাল এবং বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম উৎপাদন ক্ষেত্রে এই একই ধরনের উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করছি। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম উৎপাদনের নিরিখে ভারতে অংশীদারিত্ব বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৪ সালে ভারতে এক্ষেত্রে ৩ হাজার কোটি ডলারের সামগ্রী উৎপাদিত হ’ত, বর্তমানে তা ১০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে। গত দু’বছরে মোবাইল এবং বৈদ্যুতিন সামগ্রী রপ্তানীর পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৪ সালের পর দেশে প্রযুক্তির উন্নয়নের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০১৪’র আগে ভারতে মোবাইল তৈরির মাত্র দুটি কারখানা ছিল। আজ সেই সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। দেশে ব্রডব্যান্ড সংযোগ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ কোটি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৮০ কোটি। ইন্টারনেট সংযোগ ২৫ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ৮৫ কোটি। এই পরিসংখ্যানগুলি উপস্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর মাধ্যমে ভারতের উন্নয়ন যেমন বোঝা যায়, পাশাপাশি এই দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের চিত্রটিও ফুটে ওঠে। তিনি বলেন, সেমিকন শিল্পে ভারতে দ্রুত হারে উন্নয়ন হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আজ সারা বিশ্ব চতুর্থ পর্যায়ের শিল্প বিপ্লব প্রত্যক্ষ করছে। যে কোনও শিল্প বিপ্লবের ভিত্তি হ’ল নির্দিষ্ট একটি ক্ষেত্রের মানুষের উচ্চাকাঙ্ক্ষা। অতীতে শিল্প বিপ্লব এবং মার্কিনীদের স্বপ্ন একসূত্রে গাঁথা ছিল। আজ চতুর্থ পর্যায়ের শিল্প বিপ্লব এবং ভারতীয়দের উচ্চাকাঙ্ক্ষাও একই সুতোয় গাঁথা। ভারতের উন্নয়নের চালিকাশক্তিই হ’ল ভারতীয়দের উচ্চাকাঙ্ক্ষা। এই প্রসঙ্গে তিনি একটি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করেন, যেখানে বলা হয়েছে, দেশে দারিদ্র্যের হার দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে এবং নব্য মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উত্থান হচ্ছে। ভারতীয়দের প্রযুক্তি-বান্ধব মানসিকতার কারণে তাঁরা যে কোনও প্রযুক্তিকে সহজেই কাজে লাগাতে পারেন। এদেশে সুলভে ইন্টারনেট ডেটা পাওয়া যায়। গ্রামাঞ্চলে উন্নতমানের ডিজিটাল পরিকাঠামো এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ফলে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। “স্বাস্থ্য, কৃষি অথবা পণ্য পরিবহণ – প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারত উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্যোগী হয়েছে”। ভারতে এমন মানুষ আছেন, যাঁরা বিভিন্ন হোম অ্যাপ্লায়েন্স ব্যবহার করেন না, কিন্তু তাঁরা উন্নত সরঞ্জাম ব্যবহার করতে আগ্রহী। একইভাবে, যারা কোনও দিন সাইকেল ব্যবহার করেনি, তারা আজ অত্যাধুনিক বিদ্যুৎ চালিত বাইক চালাচ্ছে। “ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষার চালিকাশক্তি ক্রমবর্ধমান নব্য-মধ্যবিত্ত শ্রেণী”। চিপ উৎপাদনকারী শিল্প সম্ভাবনাপূর্ণ, এখানে সেইসব মানুষের আস্থা রয়েছে, যাঁরা দ্রুত প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চান।

মহামারী এবং রাশিয়া – ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, বিশ্বের একটি ভরসাযোগ্য সরবরাহ-শৃঙ্খলের প্রয়োজন। “বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের থেকে কে বেশি আস্থাশীল অংশীদার হয়ে উঠতে পারে”। সারা বিশ্বের ভারতের প্রতি আস্থা বৃদ্ধিতে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। “এদেশে একটি স্থায়ী, দায়িত্বশীল এবং সংস্কারমুখী সরকার থাকায় বিনিয়োগকারীদের ভারতের প্রতি আস্থা রয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিকাঠামো গড়ে ওঠায় শিল্প সংস্থাগুলি ভারতের বিষয়ে আস্থাশীল। প্রযুক্তি ক্ষেত্র বর্তমানে ভারতকে প্রযুক্তির বিকাশের কেন্দ্র বলে বিশ্বাস করে। ভারতে প্রতিভার প্রাচুর্য থাকায় সেমিকন্ডাক্টর শিল্প জগতের এদেশের প্রতি আস্থা রয়েছে”। তিনি আরও বলেন, “দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এবং নকশা প্রস্তুতকারকরা আমাদের শক্তি। বিশ্বের বৃহত্তম প্রাণবন্ত বাজারের অংশীদার যাঁরা হতে চান, তাঁদের ভারতের প্রতি আস্থা রয়েছে। যখন আমরা আপনাদের ভারতে আসতে বলি, তখন তার অর্থ দাঁড়ায় – চলো ভারতের জন্য তৈরি করি, বিশ্বের জন্য তৈরি করি”।

শ্রী মোদী বলেছেন, ভারত আন্তর্জাতিক স্তরে তার দায়বদ্ধতা উপলব্ধি করতে পারে এবং এই কারণে বন্ধুভাবাপন্ন রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে মিলিতভাবে একটি সর্বাঙ্গীন পরিকল্পনা করছে। তাই, ভারতে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য কাজ চলছে। সম্প্রতি ন্যাশনাল কোয়ান্টাম মিশনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন বিল সংসদে পেশ হতে চলেছে। ইঞ্জিনিয়ারিং পাঠক্রমে সেমিকন্ডাক্টর – এর উপর একটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দেশের ৩০০টি বিখ্যাত কলেজে সেমিকন্ডাক্টর নিয়ে পড়াশোনা করা যাবে। এর ফলে, স্টার্টআপ উদ্যোগেরও সুবিধা হবে। “আশা করা যাচ্ছে, আগামী ৫ বছরের মধ্যে দেশে ১ লক্ষ ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার পাওয়া যাবে। ভারতের স্টার্টআপ ব্যবস্থাপনা ক্রমবর্ধমান, যা সেমিকন্ডাক্টর শিল্পকেও শক্তিশালী করে তুলবে”।
পরিবাহী বা কন্ডাক্টর এবং অপরিবাহী এবং ইন্স্যুলেটরের মধ্যে তুলনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শক্তি সবসময়েই কন্ডাক্টরের মধ্যেই প্রবাহিত হয়, ইন্স্যুলেটরের মধ্য দিয়ে নয়। সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে ভারত প্রথম সারিতে পৌঁছনোর জন্য সবধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। গত এক দশকে দেশে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই দশকের শেষে পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানী উৎপাদনের পরিমাণ যাতে ৫০০ গিগাওয়াটে পৌঁছয়, সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে। তিনি জানান, সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ফটোভোল্টিক মডিউল, পরিবেশ-বান্ধব হাইড্রোজেন জ্বালানী উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং তড়িৎ বিশ্লেষক বা ইলেক্ট্রোলাইজার উৎপাদন বৃদ্ধি করতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ভারত বেশ কিছু নীতির সংস্কার ঘটানোর ফলে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। উৎপাদন-ভিত্তিক নতুন নতুন শিল্পগুলির জন্য কর ছাড়ের বিভিন্ন ব্যবস্থা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক স্তরে অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতে কর্পোরেট করের হার সবচেয়ে কম। কর সংগ্রহের প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয় করা, সাবেকী আইনগুলিকে বাতিল করা, ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধার জন্য বিভিন্ন বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করা এবং সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের জন্য বিশেষ উৎসাহদানের কথাও প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে তুলে ধরেন। এই সিদ্ধান্তগুলি কার্যকর করার মাধ্যমে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পকে ভারত স্বাগত জানাচ্ছে। “ভারত সংস্কারের পথ ধরে এগিয়ে চলেছে, নতুন নতুন সুযোগ এর ফলে তৈরি হবে। সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে নিয়োগের আদর্শ স্থান হিসেবে ভারত আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে”।

শ্রী মোদী বলেন, সারা বিশ্বের সরবরাহ-শৃঙ্খল, কাঁচামালের যোগান, প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ এবং যন্ত্রপাতির চাহিদা সম্পর্কে ভারত বুঝতে পারে। “বেসরকারি সংস্থাগুলির সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করায় আমরা এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছতে পেরেছি। মহাকাশ ক্ষেত্র বা ভূ-স্থানিক ক্ষেত্র সহ প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা দারুণ সফল হয়েছি”। বিভিন্ন জায়গা থেকে মতামত পাওয়ার পর আমরা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলি গ্রহণ করি। সেমিকন ইন্ডিয়া কর্মসূচির আওতায় উৎসাহদানের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এখন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে এ ধরনের শিল্প সংস্থাগুলি সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তুলতে চাইলে তাদের ৫০ শতাংশ আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে। “দেশের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের প্রসারকে ত্বরান্বিত করতে আমরা বিভিন্ন নীতির সংস্কার ঘটিয়েছি”।

ভারতের নেতৃত্বে জি-২০ গোষ্ঠীর এবারের ভাবনা ‘এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’। এই একই ভাবনায় ভারত সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে। সারা বিশ্ব যাতে ভারতের দক্ষতা ও ক্ষমতা থেকে লাভবান হয়, সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে তাঁদের মতামত ও পরামর্শের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। শিল্প সংস্থাগুলির নেতৃবৃন্দকে তিনি জানান, কেন্দ্রীয় সরকার সর্বদাই তাঁদের সঙ্গে রয়েছে। ভাষণ শেষে প্রধানমন্ত্রী লালকেল্লায় তাঁর বক্তব্যের কথা তুলে ধরে বলেন, “এটিই সময়। এটিই সঠিক সময়। শুধু ভারতের জন্য নয়, সারা বিশ্বের জন্য”।

অনুষ্ঠানে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল, কেন্দ্রীয় বৈদ্যুতিন ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী শ্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব, দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী শ্রী রাজীব চন্দ্রশেখর, ক্যাডেন্স – এর মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক শ্রী অনিরুদ্ধ দেবগণ, ফক্সকন – এর চেয়ারম্যান শ্রী ইয়ং লু, বেদান্ত – এর চেয়ারম্যান শ্রী অনিল আগরওয়াল, মাইক্রন – এর মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক শ্রী সঞ্জয় মেহরোত্রা, এএমডি-র শ্রী মার্ক পেপারমাস্টার এবং সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদক গোষ্ঠী এএমএটি-র সভাপতি শ্রী প্রভু রাজা উপস্থিত ছিলেন।

প্রেক্ষাপট:

এই সম্মেলনের মূল ভাবনা ‘ভারতের সেমিকন্ডাক্টর সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনায় অনুঘটকের কাজ করা’। শিল্প ও শিক্ষা জগৎ এবং বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দকে এক জায়গায় নিয়ে আসাই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য। সারা বিশ্বের কাছে ভারত যাতে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে, তার জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২৩ – এর সেমিকন ইন্ডিয়ায় মাইক্রন টেকনোলজি, অ্যাপলায়েড মেটেরিয়ালস্, ফক্সকন, সেমি, ক্যাডেন্স – এর মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।