নতুন দিল্লি, ১৮ আগস্ট, ২০২৩
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ভিডিও বার্তার মাধ্যমে গুজরাটের গান্ধীনগরে আয়োজিত জি২০ স্বাস্থ্য মন্ত্রীদের বৈঠকে ভাষণ দিয়েছেন।
সমাবেশের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ভারতের স্বাস্থ্য সেবায় যুক্ত ২১ লক্ষ চিকিৎসক, ৩৫ লক্ষ নার্স, ১৩ লক্ষ প্যারামেডিক্স, ১৬ লক্ষ ফার্মাসিস্ট এবং আরও কয়েক লক্ষ মানুষের পক্ষ থেকে উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের স্বাগত জানান।
জাতির জনকের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গান্ধীজি স্বাস্থ্যকে এমন এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করেছিলেন যে তিনি এই বিষয়ে ‘কী টু হেল্থ’ নামে একটি বই লিখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, যে সুস্থ থাকার জন্য নিজের মন ও শরীরের মধ্যে সাযুজ্য এবং ভারসাম্য দরকার। বস্তুত, স্বাস্থ্য হল জীবনের মূল ভিত্তি।
প্রধানমন্ত্রী একটি সংস্কৃত শ্লোক পাঠ করেন। যার অর্থ ‘স্বাস্থ্যই চূড়ান্ত সম্পদ এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হলে যে কোনো কাজই সম্পন্ন করা সম্ভব’।
প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়ভাবে জানান, কোভিড ১৯ অতিমারী আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে যে, স্বাস্থ্যের বিষয়টি অগ্রাধিকারের কেন্দ্রে থাকা উচিত। তিনি আরও বলেছেন সেই সময় দেখিয়েছে যে, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কতটা মূল্যবান – তা সে ওষুধ কিংবা প্রতিষেধক প্রদানই হোক, বা মানুষকে ঘরে ফেরানোই হোক।
বিশ্বকে কোভিড ১৯ টিকা প্রদানের জন্য ভারত সরকারের মানবিক উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভ্যাক্সিন মৈত্রী উদ্যোগের আওতায় ভারত দক্ষিণ-বিশ্ব সহ ১০০টিরও বেশি দেশে ৩০ কোটি টিকার প্রতিষেধক সরবরাহ করেছে।
অতিমারী চলাকালীন পরিস্থিতি সবচেয়ে বড় শিক্ষা বলে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা দরকার। আমাদের অবশ্যই পরবর্তী স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি সঙ্কট মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হবে। আজকের আন্তঃসংযুক্ত বিশ্বে যা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অতিমারীর সময় আমরা দেখেছি, বিশ্বের একপ্রান্তের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরিস্থিতি কীভাবে অন্য অঞ্চলগুলিতেও খুব কম সময়ের মধ্যে প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, ‘ভারতে আমরা একটি সামগ্রিক এবং আন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি অনুসরণ করছি।’ তিনি বলেন, আমরা স্বাস্থ্য পরিকাঠামো সম্প্রসারণ করছি। পরম্পরাগত চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার বিষয়ে প্রচার চালাচ্ছি এবং সবার জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা করেছি। বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের উদযাপন সার্বিক সুস্বাস্থ্যের বিষয়ে সকলের অগ্রাধিকারকেই তুলে ধরে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২৩ সালকে আন্তর্জাতিক মিলেট বর্ষ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাজরা বা ‘শ্রী অন্ন’ ভারতে পরিচিত। এর বেশি কিছু স্বাস্থ্য গুণও রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিশ্বাস করি যে, সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা প্রত্যেকের সহনশীলতাকে বাড়াতে সাহায্য করে। গুজরাটের জামনগরে ডাব্লুএইচও-হু-র গ্লোবাল সেন্টার ফর ট্র্যাডিশনাল মেডিসিন প্রতিষ্ঠা এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। জি২০ স্বাস্থ্য মন্ত্রীদের বৈঠকের সঙ্গে পরম্পরাগত ওষুধের উপর হু-র বিশ্ব সম্মেলনের আয়োজন এর সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর প্রয়াস আরও জোরদার করবে। পরম্পরাগত ওষুধের একটি বিশ্বব্যাপী ভান্ডার গড়ে তোলার জন্য আমাদের যৌথ প্রয়াস নেওয়া দরকার বলেও তিনি জানান।
স্বাস্থ্য ও পরিবেশ জৈব প্রশ্নে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশুদ্ধ বাতাস, পরিশ্রুত পানীয় জল, পর্যাপ্ত পুষ্টি এবং নিরাপদ আশ্রয় স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জলবায়ু এবং স্বাস্থ্য বিষয়ে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তার জন্য তিনি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অভিনন্দন জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর)-এর সমস্যা মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপগুলি প্রশংসনীয়।
শ্রী মোদী বলেন, এএমআর এমন এক বিপদ যা বিশ্বের জনস্বাস্থ্য এবং ওষুধ সংক্রান্ত ক্ষেত্রে এযাবৎ অর্জিত যাবতীয় সাফল্যকে প্রশ্নের সামনে দাঁড় করাতে পারে। তিনি এবিষয়ে খুশি প্রকাশ করে বলেন যে জি২০ স্বাস্থ্য কর্মী গোষ্ঠী ‘অভিন্ন স্বাস্থ্য’-এর ধারণাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। আমাদের লক্ষ্য ‘এক বিশ্ব এক স্বাস্থ্য’, যা সমগ্র বাস্তুতন্ত্রের সুস্বাস্থ্যের বিষয়টি তুলে ধরে। এর মধ্যে রয়েছে মানুষ, প্রাণী, উদ্ভিদ ও পরিবেশ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি কাউকেই পেছনে ফেলে না রাখার সপক্ষে গান্ধীজির বার্তাকেই তুলে ধরে।
স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সাফল্যে জনগণের অংশগ্রহণের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি আমাদের কুষ্ঠ নির্মূল অভিযানে সাফল্যের অন্যতম প্রধান কারণ। তিনি বলেন যক্ষ্মা নির্মূল কর্মসূচিতে আমরা জনগণের অংশগ্রহণের বিষয়ে উৎসাহ যুগিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশের জণগনকে ‘নি-ক্ষয় মিত্র’ বা ‘যক্ষ্মা নির্মূলের জন্য বন্ধু’ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছি। এর আওতায় প্রায় ১০ লক্ষ রোগীর দত্তক নিয়েছেন সাধারণ নাগরিক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৩০ সালে বিশ্বের লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে আমরা যক্ষ্মা নির্মূল করার পথে কাজ করে চলেছি।
সকলের কাছে স্বাস্থ্য পরিষেবা সহজলভ্য করে তুলতে ডিজিটাল সমাধান ও উদ্ভাবন ভূমিকার উপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রচেষ্টা হল ন্যায়সঙ্গত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থাপনা। কারণ দূর দূরান্তের রোগীরা যাতে টেলি মেডিসিনের মাধ্যমে মান সম্পন্ন চিকিৎসা পরিষেবা পান। প্রধানমন্ত্রী ভারতের জাতীয় প্ল্যাটফর্ম ই-সঞ্জীবনীর প্রশংসা করে বলেন, এপর্যন্ত এর সাহায্যে ১৪ কোটি মানুষ টেলি স্বাস্থ্য পরামর্শের সুবিধা পেয়েছেন।
শ্রী মোদী বলেন, ভারতে কো-উইন প্ল্যাটফর্ম মানব ইতিহাসে সবচেয়ে বড় টিকাদান অভিযান, যা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, ২২০ কোটিরও বেশি টিকার ডোজ সরবরাহ করা হয়েছে এবং তাৎক্ষণিক ভিত্তিতে টিকার শংসাপত্রও দেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিশ্বমানের উদ্যোগ ডিজিটাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাকে একটি সাধারণ প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টতই জানান, “আমাদের উদ্ভাবনগুলি জনগণের ভালোর জন্য উন্মুক্ত করা হোক। আসুন একইকাজে বারংবার তহবিল গঠন থেকে বিরত থাকা যাক। প্রযুক্তি সকলের কাছে সমানভিত্তিতে পৌঁছে দেওয়া যাক।” তিনি বলেন, এই উদ্যোগ দক্ষিণ বিশ্বের দেশগুলিতে স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যবধান ঘোচাতে সুযোগ করে দেবে এবং সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুবিধার লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে আমাদের আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
ভাষণের পরিশেষে প্রধানমন্ত্রী মানবতার প্রতি সনাতন ভারতের একটি বার্তা সংস্কৃত থেকে তুলে ধরেন। যার অর্থ ‘সকলে সুখী হোক, রোগমুক্ত হোক’। আমি আপনাদের আলোচনার সাফল্য কামনা করি।
AC/SS/SKD
My remarks at the G20 Health Ministers Meeting being held in Gandhinagar. @g20org https://t.co/FI5j9fEu7G
— Narendra Modi (@narendramodi) August 18, 2023