Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

প্রধানমন্ত্রী খেলো ইন্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার তৃতীয় পর্বের উদ্বোধন করেছেন

প্রধানমন্ত্রী খেলো ইন্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার তৃতীয় পর্বের উদ্বোধন করেছেন


নয়াদিল্লি, ২৫ মে, ২০২৩

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সিং – এর মাধ্যমে খেলো ইন্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার তৃতীয় পর্বের উদ্বোধন করেছেন। ২১টি বিভাগে ২০০-রও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ হাজার ৭৫০ জনের বেশি ক্রীড়াবিদ এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে ২০২৩-এর খেলো ইন্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, আজ উত্তরপ্রদেশ ক্রীড়া জগতের প্রতিভাদের মিলন ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। এই রাজ্য থেকে নির্বাচিত একজন সাংসদ হিসাবে তিনি দেশের বিভিন্ন রাজ্য ও অঞ্চল থেকে আসা ৪ হাজারেরও বেশি প্রতিযোগীকে স্বাগত জানাচ্ছেন। তাঁর সংসদীয় কেন্দ্র বারাণসীতে সমাপ্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে, যার জন্য তিনি বিশেষভাবে আনন্দিত। দেশ যখন আজাদি কা অমৃত মহোৎসব উদযাপন করছে, সেই সময় খেলো ইন্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার তৃতীয় পর্ব আয়োজনের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’ ভাবনায় এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে দলগতভাবে কাজ করার উদ্যোগটি প্রতিফলিত হবে। উত্তরপ্রদেশের যেসব অঞ্চলে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে, সেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা খেলোয়াড়রা পরস্পরের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। ফলস্বরূপ, এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়দের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জায়গাগুলির যোগাযোগ গড়ে উঠবে এবং ভবিষ্যতে তাঁরা এই বিষয়ে স্মৃতিচারণা করবেন। তিনি তাঁদের সকলের সাফল্য কামনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভারতে গত ৯ বছরে ক্রীড়া জগতে এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে, যেখানে খেলাধূলার মাধ্যমে সমাজের ক্ষমতায়নের এক নতুন যুগ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, অতীতে খেলাধূলা সরকারি স্তর থেকে সহায়তা পেত না। এর ফলে, দরিদ্র, মধ্যবিত্ত ও গ্রামাঞ্চলে যেসব ছোট ছোট ছেলেমেয়ে খেলাধূলায় পারদর্শী ছিল, তাদের পক্ষে খেলা চালিয়ে যাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে। খেলাধূলায় জীবিকার সুযোগ কম থাকায় বহু বাবা-মা এই বিষয়ে উৎসাহী ছিলেন না। কিন্তু বর্তমানে অভিভাবক-অভিভাবিকাদের মধ্যে খেলাধূলা সম্পর্কে ধারণার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। “খেলাধূলাকে এখন বিকল্প জীবিকা হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে এবং খেলো ইন্ডিয়া অভিযান এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে”।

শ্রী মোদী ভারতে কমনওয়েলথ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের সময় বিভিন্ন কেলেঙ্কারির কথা উল্লেখ করেন। এর মধ্য দিয়ে পূর্ববর্তী সরকারগুলির খেলাধূলার প্রতি মনোভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ‘পঞ্চায়েত যুব ক্রীড়া আউর খেল অভিযান’ যা পরবর্তীতে রাজীব গান্ধী অভিযান হিসেবে পরিচিত হয়, সেই প্রকল্পের মতো নানা কর্মসূচি বাস্তবায়নে যথাযথ উদ্যোগের অভাব নজরে আসে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অতীতে খেলাধূলার পরিকাঠামোর অভাব ছিল। বর্তমানে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। আজ শহরাঞ্চলে ক্রীড়া পরিকাঠামোর জন্য সরকার বহু অর্থ ব্যয় করছে। পূর্ববর্তী সরকার ছ’বছর সময়কালে ক্রীড়া ক্ষেত্রে মাত্র ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছিল। কিন্তু, বর্তমান সরকার ক্রীড়া পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে। এর ফলে, অনুশীলন চালাতে ক্রীড়াবিদদের সুবিধা হচ্ছে।

এ পর্যন্ত ৩০ হাজারের মতো ক্রীড়াবিদ খেলো ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন। এদের মধ্যে ১ হাজার ৫০০ জনকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ৯ বছর আগে খেলাধূলার জন্য বাজেট যত অর্থ বরাদ্দ ছিল, বর্তমানে তা তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তরপ্রদেশের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লক্ষ্ণৌতে ক্রীড়া পরিকাঠামোর সম্প্রসারণ ঘটানো হয়েছে। বারাণসীতে ৪০০ কোটি টাকা সিগ্রা স্টেডিয়ামের আধুনিকীকরণ এবং অত্যাধুনিক ক্রীড়া পরিকাঠামো নির্মাণে ব্যয় করা হচ্ছে। লালপুরে ও মীরাটে সিন্থেটিক হকি খেলার মাঠ, গোরক্ষপুরে বীরবাহাদুর সিং স্পোর্টস্‌ কলেজে বিভিন্ন খেলার অনুশীলনের জন্য হল এবং শাহরানপুরে কৃত্রিমভাবে নির্মিত দৌড়ানোর জায়গার কথা তাঁর ভাষণে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

শ্রী মোদী ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ক্রীড়াবিদদের আরও বেশী অংশগ্রহণের উপর গুরুত্ব দেন। এর ফলে, তাঁরা বিভিন্ন খেলায় অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পাবেন এবং নিজেদের মানোন্নয়ন ঘটাতে পারবেন। খেলো ইন্ডিয়া ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের এটি অন্যতম কারণ। বর্তমানে এই প্রতিযোগিতা খেলো ইন্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং খেলো ইন্ডিয়া শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় প্রসারিত হয়েছে। এগুলি আয়োজনের সুফল এখন পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের ক্রীড়াবিদদের মধ্যে আস্থার জন্ম নিচ্ছে, যার ফল বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় আমরা দেখতে পাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় শিক্ষা নীতিতে খেলাধূলাকে একটি বিষয় হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যেখানে এটি পাঠ্যসূচির অন্তর্গত থাকবে। বিভিন্ন রাজ্যে উচ্চ শিক্ষায় খেলাধূলা সংক্রান্ত বিশেষ পাঠক্রম চালু করার নেওয়া হয়েছে। উত্তর প্রদেশ এক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। মীরাটে মেজর ধ্যানচাঁদ ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গটি তিনি তাঁর ভাষণে উল্লেখ করেন। দেশ জুড়ে ১ হাজারটি খেলো ইন্ডিয়া কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে। ১২টি জাতীয় উৎকর্ষ কেন্দ্র থেকে ক্রীড়াবিদদের প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাঁরা যাতে আরও ভালো ফল করতে পারেন, তার জন্য ক্রীড়া বিজ্ঞানের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। “ভারতের চিরায়ত খেলাগুলির হৃত সম্মান খেলো ইন্ডিয়ার মধ্য দিয়ে পুনরুদ্ধার করা হয়েছে”। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, গাটকা, মাল্লাখাম্ব, টাং-টা, কালারিপায়াট্টু এবং যোগাসনের মতো বিভিন্ন চিরায়ত খেলার জন্য সরকার বৃত্তির ব্যবস্থা করেছে।

খেলো ইন্ডিয়া কর্মসূচিতে মহিলাদের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শ্রী মোদী একে উৎসাহব্যঞ্জক বলে আখ্যা দেন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন শহরে খেলো ইন্ডিয়া উইমেন্স লীগের আয়োজন করা হবে। “নানা বয়সের প্রায় ২৩ হাজার মহিলা ক্রীড়াবিদ এখনও পর্যন্ত অংশ নিয়েছেন”। প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, খেলো ইন্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিপুল সংখ্যায় মহিলা ক্রীড়াবিদরা অংশ নিয়েছেন। তিনি তাঁদের সাফল্য কামনা করেন।

শ্রী মোদী বলেন, “আপনাদের মেধা, আপনাদের উন্নতির মধ্যে ভারতের উন্নয়ন নিহিত রয়েছে। আপনারা ভবিষ্যতের বিজয়ী”। ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকাকে আরও উঁচুতে তুলে ধরার দায়িত্ব আমাদের ক্রীড়াবিদদের বলে তিনি উল্লেখ করেন। খেলোয়াড়সুলভ মানসিকতা এবং দলগতভাবে কাজ করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি এই ভাবনা জয়-পরাজয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, তা হলে তা কখনই মঙ্গলজনক নয়।

প্রধানমন্ত্রী খেলোয়াড়োচিত মানসিকতার ব্যাখ্যা করে বলেন, “খেলাধূলা ক্ষুদ্র স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে সমন্বিত প্রয়াসের সাফল্য অর্জন করতে আমাদের অনুপ্রাণিত করে”। খেলাধূলার মাধ্যমে আমরা নিয়ম মেনে চলার শিক্ষা পাই। খেলোয়াড়রা প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে কখনও সরে আসেন না। তাঁরা নিয়ম মেনে তাঁদের দায়িত্ব পালন করেন। পরিশেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিয়মের গণ্ডীর মধ্য থেকে যখন কেউ ধৈর্য্য সহকারে বিরোধীদের মোকাবিলা করেন, তখন তাঁর খেলোয়াড় সত্ত্বাটি চিহ্নিত করা যায়। “একজন বিজয়ী তখনই শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াবিদ হয়ে ওঠেন, যখন তিনি খেলোয়াড়োচিত সত্ত্বাটি মেনে চলেন। সমাজ যখন কোনও বিজয়ী খেলোয়াড়কে দেখে অনুপ্রাণিত হয়, তখনই ঐ বিজয়ী একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

প্রেক্ষাপট:

প্রধানমন্ত্রী দেশে খেলাধূলার সংস্কৃতির আরও উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। যুবক-যুবতীরা যাতে বিভিন্ন খেলাধূলা অনুশীলন করেন, তিনি তাঁদের উৎসাহ দেন। দেশের মধ্যে খেলাধূলার পরিবেশকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। সরকার উদীয়মান ক্রীড়া প্রতিভাদের সহায়তা করছে। খেলো ইন্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন তারই অঙ্গ।

খেলো ইন্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার তৃতীয় পর্ব উত্তরপ্রদেশে ২৫ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। বারাণসী, গোরক্ষপুর, লক্ষ্ণৌ এবং গৌতমবুদ্ধ নগরে প্রতিযোগিতার বিভিন্ন পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। ২১টি বিভাগে ২০০-রও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ হাজার ৭৫০ জন ছাত্রছাত্রী এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন। ৩ জুন বারাণসীতে সমাপ্তি অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়েছে। ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ম্যাসকট হিসেবে উত্তরপ্রদেশের রাজ্য প্রাণী বারাশিঙ্গাকে বাছাই করা হয়েছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘জিতু’।

 

CG/CB/SB