Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

‘মহিলাদের অর্থনৈতিক সশক্তিকরণ’ নিয়ে বাজেট পরবর্তী ওয়েবিনারে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য

‘মহিলাদের অর্থনৈতিক সশক্তিকরণ’ নিয়ে বাজেট পরবর্তী ওয়েবিনারে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য


নয়াদিল্লি, ১০ মার্চ, ২০২৩

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী মহিলাদের অর্থনৈতিক সশক্তিকরণের বিষয় নিয়ে বাজেট পরবর্তী ওয়েবিনারে বক্তব্য রাখেন। ২০২৩-এর কেন্দ্রীয় বাজেটে ঘোষিত উদ্যোগের সফল রূপায়ণের লক্ষ্যে মতামত এবং পরামর্শ চেয়ে সরকার আয়োজিত বাজেট পরবর্তী ১২টি ওয়েবিনারের এটি একাদশতম।

প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ২০৪৭-এর মধ্যে ‘বিকশিত ভারত’-এর লক্ষ্য অর্জনে দেশ এ বছরের বাজেটকে এক পূণ্য সূচনা হিসেবে দেখছে। ভবিষ্যৎ অমৃতকালের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এবারের বাজেট পরীক্ষিত। এটি দেশের পক্ষে এক শুভ লক্ষণ যে দেশের মানুষেরা আগামী ২৫ বছরকে তাঁদের কাঙ্খিত লক্ষ্যের সঙ্গে যুক্ত করছেন বলে শ্রী মোদী জানান।

প্রধানমন্ত্রী পুনরায় বলেন, বিগত ৯ বছর ধরে মহিলা-চালিত উন্নয়নের দৃষ্টিভঙ্গিকে সামনে রেখে দেশ এগিয়ে চলেছে। তিনি জানান, এই প্রয়াসকে ভারত বিশ্বস্তরে নিয়ে গেছে এবং জি-২০-তে ভারতের সভাপতিত্বে এটা এক উল্লেখযোগ্য জায়গা পেয়েছে। মহিলা-চালিত উন্নয়নের প্রয়াসের ক্ষেত্রে এ বছরের বাজেট এক নতুন গতিশক্তি সঞ্চার করবে বলে তিনি জানান।

শ্রী মোদী উল্লেখ করেন যে সঙ্কল্পের ক্ষেত্রে নারীশক্তির দৃঢ়তা, তার কল্পনা, তার ইচ্ছাশক্তি, লক্ষ্য অর্জনে তার সক্ষমতা এবং কঠিন প্রয়াস মাতৃশক্তির প্রতিফলন। তিনি বলেন, এই সমস্ত গুণবত্তা এই শতাব্দীতে দেশের অগ্রগতিসাধন গতি এবং শ্রীবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এক নির্ণায়ক ভূমিকা নিচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহিলা সশক্তিকরণের প্রয়াসের ফল প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে এবং দেশের সমাজ জীবনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আমরা অনুভব করছি। তিনি বলেন, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং গত ৯-১০ বছরে হাইস্কুল ও তার পরবর্তী শিক্ষাক্রমে পাঠরত ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, কারিগরি এবং গণিতশাস্ত্রে মেয়েদের যুক্ত হওয়ার সংখ্যা আজ প্রায় ৪৩ শতাংশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং জার্মানির তুলনায় এই সংখ্যা বেশি। চিকিৎসা, ক্রীড়া, ব্যবসা অথবা রাজনীতির মতো ক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণের সংখ্যা বাড়ছেই তা নয়, তাঁরা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭০ শতাংশ ‘মুদ্রা’ ঋণের সুবিধাভোগী হলেন মহিলারা এবং ‘স্বনিধি’র অধীন বন্ধকবিহীন ঋণ প্রকল্পে মহিলারা সুবিধা লাভ করছেন। এছাড়াও, পশুপালন, মৎস্যচাষ, গ্রামীণ শিল্প, এফপিও এবং ক্রীড়াক্ষেত্রেও মহিলাদের সংখ্যা বাড়ছে।

শ্রী মোদী বলেন, দেশের জনসংখ্যার অর্ধেকের সাহায্য নিয়ে দেশ কিভাবে এগিয়ে যেতে পারে এবং মহিলাশক্তির সক্ষমতার প্রসার কিভাবে ঘ্টানো যায়, এবারের বাজেটে তা প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, ‘মহিলা সম্মান সঞ্চয় সার্টিফিকেট’ প্রকল্পে মেয়েরা ৭.৫ শতাংশ সুদ পায়। ‘পিএম আবাস যোজনা’র ৮০ হাজার কোটি টাকা মহিলা সশক্তিকরণের লক্ষ্যে এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ৩ কোটি আবাসনের সংখ্যাগরিষ্ঠই মহিলাদের নামে। এক্ষেত্রে ‘পিএম আবাস যোজনা’য় সশক্তিকরণের বিশেষত্বের দিকটির ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথাগতভাবে মহিলাদের নামে আগে কোনও সম্পত্তি থাকতা না। তিনি বলেন,  গৃহস্থালীর অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ‘পিএম আবাস’ মহিলাদেরকে নতুন কন্ঠ দিয়েছে।

শ্রী মোদী বলেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে সরকারের সহায়তা প্রদানের লক্ষ্য হল এদের মধ্যে নতুন ইউনিকর্ন গড়ে তোলা। তিনি বলেন, পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে মহিলাদের সশক্তিকরণে দেশের দৃষ্টিভঙ্গি এতে ধরা পড়ছে। আজ দেশের পাঁচটি অ-কৃষি ব্যবসা মহিলা দ্বারা চালিত বলে তিনি উল্লেখ করেন। গত ৯ বছরে ৭ কোটিরও বেশি মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছেন। তাদের মূলধনী চাহিদার ক্ষেত্রে এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির ৬ লক্ষ ২৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ যে এক গুরুত্বপূর্ণ মূল্যশৃঙ্খল তৈরি করেছে তা বোঝা যায়।

প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে ছোট উদ্যোগপতি হিসেবে মহিলারা যে অবদান রাখছেন তাই নয়, সক্ষম আর্থিক ব্যক্তি হিসেবেও তাঁরা নিজেদের গড়ে তুলছেন। ‘ব্যাঙ্ক সখী’, ‘কৃষি সখী’, ‘পশু সখী’ কর্মসূচিগুলি গ্রামীণ বিকাশে এক নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমবায় ক্ষেত্রগুলির রূপান্তর ঘটেছে এবং এই ক্ষেত্রে মহিলাদের ভূমিকারও রূপান্তর ঘটানো হয়েছে। ২ লক্ষেরও বেশি বহু উদ্দেশ্যসাধক সমবায়, দুগ্ধ সমবায়, মৎস্য সমবায় আগামীদিনে তৈরি করতে হবে। প্রাকৃতিক চাষবাসের সঙ্গে ১ কোটি কৃষককে যুক্ত করার একটি লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। মহিলা কৃষক এবং উৎপাদক গোষ্ঠী এক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারেন বলে তিনি জানান।

শ্রী অন্ন-র প্রসারের ক্ষেত্রে মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা ব্যাখ্যা করে শ্রী মোদী বলেন, শ্রী অন্ন-র ক্ষেত্রে ১ কোটিরও বেশি আদিবাসী মহিলার প্রথাগত অভিজ্ঞতা এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির অঙ্গ। শ্রী অন্ন-কে প্রক্রিয়াজাত খাবারে রূপান্তরিত করে তার বিপণনের সম্ভাবনার দিকগুলিকে আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। বহুক্ষেত্রে সরকারি সংস্থা ক্ষুদ্র বনজ উৎপাদনকে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বাজারে নিয়ে আসছে। প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে অনেক স্বনির্ভর গোষ্ঠী গঠন করা হয়েছে এবং আমাদের আরও বৃহত্তরে স্তরে একে নিয়ে যেতে হবে বলে তিনি জানান।

দক্ষতা বিকাশের ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে এই বাজেটে ‘বিশ্বকর্মা’ প্রকল্পের যে কথা বলা হয়েছে তা মহিলা সশক্তিকরণে নতুন সম্ভাবনার এক সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করবে। অনুরূপভাবে, জিইএম এবং ই-কমার্স মহিলাদের ব্যবসার সুযোগকে ক্রমেই সম্প্রসারিত করছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি জানান।

প্রধানমন্ত্রী পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, দেশ ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস এবং সবকা প্রয়াস’ – এই ভাবধারা নিয়ে এগিয়ে চলেছে। তিনি বলেন, দেশের কন্যাদের জাতীয় সুরক্ষায় ভূমিকা নিতে দেখা যাচ্ছে। রাফায়েল যুদ্ধবিমান ওড়াচ্ছেন তাঁরা। তাঁরা নিজেরা যখন উদ্যোগপতি হয়ে উঠবেন এবং ঝুঁকি ও সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, তখন তাঁদেরকে নিয়ে চিন্তারও পরিবর্তন ঘটবে। তিনি উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক নির্বাচনে নাগাল্যান্ডে এই প্রথমবার দুই মহিলা বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। এঁদের একজন মন্ত্রী পদে শপথও নিয়েছেন। মহিলাদের প্রতি সম্মান এবং সমতার বোধের উত্তোরণ ঘটানোর মধ্য দিয়েই দেশ এগিয়ে যেতে পারবে। আমি আপনাদের সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি, মহিলা, ভগিনী এবং কন্যাদের চলার পথে যে কোনও রকম প্রতিবন্ধকতাকে উৎপাটিত করার সঙ্কল্প নিয়ে এগিয়ে চলুন।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে রাষ্ট্রপতি শ্রীমতী দ্রৌপদী মুর্মুর একটি লেখা থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণ শেষ করেন। রাষ্ট্রপতি লিখেছেন – “অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করা আমাদের ওপর নির্ভর করছে। এর ফলে আজ আমি আপনাদের প্রত্যেককে আহ্বান জানাচ্ছি আপনাদের পরিবারে, এলাকায় বা কর্মক্ষেত্রে একটি পরিবর্তন আনার কাজে আপনারা যুক্ত হন। এমন পরিবর্তন যা একটি মেয়ের মুখে হাসি ফোটাবে এবং জীবনে এগিয়ে যাওয়ার পথকে মসৃণ করবে। এটি একটি অনুরোধ, আমি আগেও যা বলছি, হৃদয় থেকে উৎসারিত।”
 

 

PG/AB/DM/