Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

হরিয়ানা রাজ্য প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উৎসবের উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ

হরিয়ানা রাজ্য প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উৎসবের উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ

হরিয়ানা রাজ্য প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উৎসবের উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ


আজ হরিয়ানারাজ্য প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব শুরু হচ্ছে। এহেন আনন্দঘন সময়ে হরিয়ানারাজ্যবাসীকে আমার অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আপনাদের মুখ্যমন্ত্রী যেমন বলেছেন, এইসুবর্ণজয়ন্তী কোনও নির্দিষ্ট দলের নয়, কোনও সরকারের নয়, এই সুবর্ণজয়ন্তী সকলহরিয়ানাবাসীর।

ব্যক্তিরজীবনেও জন্মদিন পালন অথবা যে কোনও বিশেষ দিন পালন ব্যক্তিকে নতুন সংকল্প নিতেপ্রেরণা যোগায়। তেমনই সমাজ ও রাজ্যকেও এমন দিনগুলি নতুন সংকল্প নিতে প্রেরণাযোগায়।

এইসুবর্ণজয়ন্তীর আনন্দময় মুহূর্তে আমি সকল হরিয়ানাবাসীর প্রতি আবেদন রাখব, ১৯৬৬ সালেযে দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল হিসেবে, যে সকল বিশেষ উদ্দেশ্যসাধনের কথা ভেবে এই নতুনরাজ্য গড়ে তোলা হয়েছিল, তখনকার খবরের কাগজগুলো পড়লে জানা যায়, আজ এই পবিত্রমুহূর্তে সেসব দিনের কথা ভেবে বিগত ৫০ বছরে সেই সকল উদ্দেশ্য সাধিত হয়েছে কি না,যদি না হয়ে থাকে তাহলে আমরা কতদূর পৌঁছেছি, লক্ষ্যে পৌঁছতে আর কতটা পথ চলতে হবে,দ্রুত পৌঁছতে গেলে কী করতে হবে – এইসব কিছু বিচার-বিশ্লেষণ করার সময় এসে গেছে।

বিগত ৫০ বছরেরগৌরবগাথা, বিগত ৫০ বছরে এই রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যাঁরা অবদান রেখেছেন, তাঁদেরপরিশ্রম এবং সংকল্পই আজ আমাদের এতদূর পৌঁছে দিয়েছে। কিন্তু আজ থেকে ১০ বছর আগে যেগতিতে কাজ হচ্ছিল, তখনকার সময়ের নিরিখে তা হয়তো মেনে নেওয়া যেত। গ্রামে খাটে বসেহাসিঠাট্টার মাধ্যমে হরিয়ানার মানুষ যথার্থ বক্তব্য রাখার ক্ষমতা রাখেন। নিজস্বগ্রামীণ ভাষায় তাঁরা অনেক গভীর কথা বলে দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন।

এ রাজ্যে কয়েকবছর ধরে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে। সেজন্য আমি হরিয়ানাকে খুব ভালোভাবে চিনি।হরিয়ানা একটি ছোট রাজ্য হতে পারে, কিন্তু জীবনের এমন কোনও ক্ষেত্র নেই যেখানেহরিয়ানার মানুষের পরিশ্রম সাফল্য এনে দেয়নি। এই রাজ্যের অধিকাংশ মানুষই কৃষক।কিন্তু হরিয়ানার ব্যবসায়ীরা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে প্রতিযোগিতার পরিবেশ গড়ে তুলতেসক্ষম হয়েছেন।

এই রাজ্যেরঅধিকাংশ মানুষই কৃষক। কিন্তু এদেশের প্রত্যেক ১০ জন সেনা জওয়ানের মধ্যে একজনহরিয়ানার বাসিন্দা। এ রাজ্যের এমন কোনও এলাকা নেই যেখানে কোনও বীর সৈনিক জন্মগ্রহণকরেননি, দেশের জন্য আত্মদান করেননি – এটাই হরিয়ানার বিশেষত্ব। এই রাজ্যে স্বামীদয়ানন্দ সরস্বতীর প্রভাব অত্যন্ত গভীর। স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর নাম উচ্চারণ করলেইএ রাজ্যের হাজার হাজার মানুষের চোখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। এমনই অনেক মহাপুরুষের নামেরসঙ্গে এরাজ্য জড়িত।

বিশ্বে অনেকযুদ্ধ হয়েছে। কিন্তু এমন যুদ্ধ আর একটিও হয়েছে কি না সন্দেহ, যেখানে জীবন-মৃত্যুরসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে এক মহাপুরুষ আরেক মহাপুরুষকে জীবনের সর্বোৎকৃষ্ট আদর্শের কথাবলে যান, সেই আদর্শ হাজার হাজার বছর ধরে মানবজাতিকে পথপ্রদর্শন করে। সেই বাণী যেগ্রন্থে বিধৃত রয়েছে, সেই মহাগ্রন্থ গীতার রচনাস্থল এবং সেই পবিত্র যুদ্ধভূমিটিওএই রাজ্যেই অবস্থিত। সাধারণতঃ, মননচিন্তন হয় কোনও শান্ত-চিত্ত গৃহকোণে, মনের গভীরেডুব দিয়ে তুলে আনতে হয় দর্শনকে। এই যুদ্ধভূমির বিশেষত্ব এমনই, এই যুদ্ধের ময়দানেওএমন গভীর জীবনাদর্শের তত্ত্বজ্ঞান পরিবেশিত হতে পারে । এই অনুপমদৃষ্টান্ত এই মাটি থেকেই আমরা পেয়েছি। কিন্তু যাঁর যত মহত্ব রয়েছে, তাঁর দায়িত্বওতত বেশি থাকে। আমার মনে একটা দুঃখ রয়েছে যে, এহেন গভীর সংস্কারসম্পন্ন প্রদেশে,সর্বদা নতুন কিছু স্বীকার করার সামর্থ্য যে রাজ্যের রয়েছে, সেই রাজ্যেই মায়েরগর্ভে কন্যাসন্তানদের কেমন করে নির্বিচারে হত্যা করা হয়?

আমিমনোহরলালজী-কে অভিনন্দন জানাতে চাই, আমি হরিয়ানাবাসীকেও অভিনন্দন জানাতে চাই, এইমাটি থেকেই আমি ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ আন্দোলনের সূত্রপাত করে হরিয়ানারজনসাধারণের কাছে কন্যাসন্তানদের জীবন রক্ষার আবেদন রেখেছিলাম। আজ আমি অত্যন্তআনন্দের সঙ্গে বলতে পারি যে, হরিয়ানার মানুষ আমার এই আবেদনে অভূতপূর্ব সাড়াদিয়েছেন। আজ সারা দেশে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে দ্রুত যে রাজ্যএগিয়ে এসেছে তার নাম হরিয়ানা।

আমি সেইমায়েদের অভিনন্দন জানাতে চাই, যাঁরা শাশুড়ি হিসেবে পুত্রবধূর গর্ভেরকন্যাভ্রূণটিকে রক্ষা করার সংকল্প গ্রহণ করেছেন, আমি সেই বয়স্ক মানুষদের শ্রদ্ধাজানাতে চাই, যাঁরা সংকল্প গ্রহণ করেছেন যে আর হরিয়ানার একটি কন্যাকেও মরতেও দেব না– মারতেও দেব না। হরিয়ানা রাজ্য প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে আমি আপনাদেরসংকল্পকে সম্মান জানিয়ে মাথা নত করে প্রণাম জানাই। হরিয়ানার মেয়েরা আজ শুধুহরিয়ানারই নয়, সারা ভারতের মুখ উজ্জ্বল করেছে।

আমি শ্রদ্ধেয়মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলালজীর সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি। কারণ, সরকার কাজ করেদেখিয়েছে। আজ তারা রাজ্যের কয়েকটি জেলাকে খোলামাঠে প্রাতঃকৃত্য মুক্ত ঘোষণাকরেছেন। আপনারা কল্পনা করুন, একবিংশ শতাব্দীর দেড় দশক পার হয়ে গেছে। আজও আমাদেরদেশের নানাপ্রান্তে মা ও বোনেরা গ্রামের মাঠে খোলা জায়গায় প্রাকৃতিক কাজ সম্পন্নকরতে বাধ্য হন। এর থেকে বড় লজ্জার কথা আর কী হতে পারে! সেজন্য তাঁদের প্রাকৃতিককাজের জন্য সূর্য ওঠার আগে অথবা সূর্যাস্তের অপেক্ষা করতে হয়। সারাদিন তাঁরালজ্জায় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে পারেন না – এর চেয়ে বড় অত্যাচার আর কী হতে পারে?

হরিয়ানার যেজেলাগুলিকে আপনারা আজ খোলামাঠে প্রাতঃকৃত্য মুক্ত ঘোষণা করেছেন, সেই জেলাগুলিরঅধিবাসীদের আমি অভিনন্দন জানাই। সম্ভব হলে এই সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব সম্পূর্ণ হওয়ারআগেই আপনারা গোটা রাজ্যকে খোলামাঠে প্রাতঃকৃত্য মুক্ত ঘোষণা করার মতো কাজ করুন।আমার দৃঢ় বিশ্বাস, হরিয়ানা তা করতে পারবে।

আজ হরিয়ানাগোটা দেশকে নতুন পথ দেখাচ্ছে। রাজ্যের ৮টি জেলাকে ইতিমধ্যেই তাঁরা কেরোসিন মুক্তঘোষণা করে দিয়েছেন। যেসব জেলার প্রত্যেকটি গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ চলেএসেছে, প্রত্যেক বাড়িতে রান্নার গ্যাসের ব্যবস্থা রয়েছে, গ্যাস সিলিন্ডারের কোনওঅভাব নেই, সেখানে কেরোসিনের ভর্তুকি কেন চলবে? ঐ ভর্তুকিপ্রাপ্ত কেরোসিন নিশ্চয়ইঅন্য কোথাও চলে যায়। দালালদের হাত ধরে অন্যত্র কালোবাজারে বিক্রি হয়। ডিজেলেকেরোসিন মেশানো হয়, সেই ভেজাল তেলে যে সমস্ত গাড়ি চলে, সেগুলি ভীষণরকম পরিবেশ দূষণকরে। সেজন্য আমি দেশের সকল রাজ্য সরকারকে অনুরোধ করেছি, আপনারা কেরোসিন বাঁচান। এরফলে আপনারা যত টাকা সাশ্রয় করতে পারবেন, পুরোটাই আমরা রাজ্যের মানুষের উন্নয়নেরজন্য আপনাদের দিয়ে দেব। আজ হরিয়ানার ৮টি জেলাকে কেরোসিনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আরআমাকে বলা হয়েছে যে, আগামী মার্চ মাসের মধ্যে গোটা হরিয়ানাই কেরোসিনমুক্ত রাজ্যঘোষণা হবে। এর ফলে, অনেক কম পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থ আমদানি করতে হবে, বিদেশি মুদ্রারওসাশ্রয় হবে । যতটা সাশ্রয় আপনারা করবেন সেই টাকা আমরা হরিয়ানার মানুষের উন্নয়নেরস্বার্থে রাজ্য সরকারের হাতে তুল দেব। তা হলে হরিয়ানার প্রিয় ভাই ও বোনেরা, এইসুবর্ণজয়ন্তী বর্ষে আপনারা এক কদম এগিয়ে এলে আপনার রাজ্য আড়াই কোটি কদম এগিয়েযাবে। আর হরিয়ানা আড়াই কোটি কদম এগিয়ে গেলে ভারতের কোনও রাজ্যের ক্ষমতা আছে যেহরিয়ানার সঙ্গে পাল্লা দেয়!

সুবর্ণজয়ন্তীবর্ষে আমি চাই যে, প্রত্যেক হরিয়ানাবাসী সংকল্প গ্রহণ করুন যে আমরা এক পা এগিয়েযাব, তা হলেই দেখবেন হরিয়ানা দেশের মধ্যে এক নম্বর রাজ্য হয়ে উঠবে। আমাদের যেসামর্থ্য রয়েছে, যে সব ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে আর যেসব অন্তর্নিহিত শক্তি সম্পর্কেআমরা অবহিত নই, সেগুলিকেও চিনতে হবে, এগিয়ে যেতে হবে। দেশের রাজধানী দিল্লি চারপাশথেকে হরিয়ানা বেষ্টিত। হরিয়ানার উন্নতি হলে দেশের রাজধানী দিল্লিও পিছিয়ে থাকবেনা। আপনাদের পরিশ্রমের সুফল ভোগ করে দিল্লিও এগিয়ে যাবে। অর্থাৎ, দেশের রাজধানীকেএগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে ভারতের মুখ উজ্জ্বল করার সামর্থ্য হরিয়ানার রয়েছে।

ভৌগোলিকদৃষ্টিকোণ থেকে আপনারা এমনই গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশে বসবাস করেন। এই রাজ্য প্রতিষ্ঠারসুবর্ণজয়ন্তী পালন রাজ্যের সীমা অতিক্রম করে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। আমাদের গ্রামগুলিউন্নত হবে, এলাকার উন্নয়ন হবে। আর এই উন্নয়ন গোটা হরিয়ানাকে উন্নতির চরম শিখরেপৌঁছে দেবে। এই সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আমরা অনেক প্রকল্পে অংশগ্রহণ করব,গণঅংশীদারিত্ব বাড়াব, নিছকই প্রকল্প করার জন্য প্রকল্প করব না, নির্দিষ্ট সময়সীমারমধ্যে, নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য একসঙ্গে কাজ করব।

হরিয়ানার এতশক্তি রয়েছে যে, এই রাজ্য দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ‘গ্রোথ ইঞ্জিন’ রূপেকাজ করতে পারে।

আমি আরেকবারগোটা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা সকল হরিয়ানাবাসীকে, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হরিয়ানায়বসবাসকারী সকল নাগরিককে এই সুবর্ণজয়ন্তীর শুভেচ্ছা জানাই। আর আশা করি, আমরাশান্তি, ঐক্য, সদ্ভাবনার মন্ত্র নিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আগামী প্রজন্মের ভাগ্যসুনিশ্চিত করার পথে এগিয়ে যাব।

যেসব স্বপ্ননিয়ে হরিয়ানা রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, সেই সকল স্বপ্ন আজও বাস্তবায়িত হয়নি,সেসব বাস্তবায়নের জন্য যে বৃহৎ উল্লম্ফনের প্রয়োজন রয়েছে, আমার দৃঢ় বিশ্বাস,হরিয়ানাবাসী সেই উল্লম্ফনের সামর্থ্য রাখে। আমি বিশ্বাস করি, আপনারা আমার এই ভরসাবিফলে যেতে দেবেন না। আমি বিশ্বাস করি, এই সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আপনারা অবশ্যইউন্নয়নের নতুন উচ্চতা অতিক্রম করবেন। অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ।

PG/SB/SB