Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

ভয়েস অফ গ্লোবাল সাউথ সামিট ২০২৩-এ উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

ভয়েস অফ গ্লোবাল সাউথ সামিট ২০২৩-এ উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ


নয়াদিল্লি, ১২ জানুয়ারি, ২০২৩

মহোদয়গণ,

গ্লোবাল সাউথ-এর নেতাদের আমার নমস্কার। এই শিখর সম্মেলনে আপনাদের স্বাগত জানাতে পেরে আমি আনন্দিত। সারা বিশ্ব থেকে আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। আমরা এমন সময় মিলিত হয়েছি যখন নতুন বছর এসেছে, সঙ্গে এনেছে নতুন আশা, নতুন প্রাণশক্তি। ১৩০ কোটি ভারতীয়র পক্ষ থেকে আপনাদের সকলকে এবং আপনাদের দেশকে ২০২৩-এর জন্য আমার শুভেচ্ছা জানাই।

আমরা আরও একটি সঙ্কটপূর্ণ বছরের পাতা ওল্টালাম যেখানে আমরা দেখেছি যুদ্ধ, সংঘর্ষ, সন্ত্রাসবাদ এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা; খাদ্য, সার এবং জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি; জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ, এবং কোভিড অতিমারীর দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক প্রভাব। এটা স্পষ্ট যে বিশ্ব এরকম সঙ্কটের মধ্যে। এটাল বলা খুব মুশকিল যে অস্থিরতা কতদিন চলবে।

মহোদয়গণ,

আমরা এই দক্ষিণ গোলার্ধ ভবিষ্যতের বড় অংশীদার। সারা বিশ্বের জনসংখ্যার তিন-চতুর্থাংশ বাস করে আমাদের দেশগুলিতে। আমাদের সমান বক্তব্য থাকা উচিৎ। সেজন্য আট দশকের পুরনো আন্তর্জাতিক প্রশাসনের মডেল ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছে। আমাদের উচিৎ আগামী দিনগুলিকে রূপ দেওয়ার।

মহোদয়গণ,

বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক সমস্যা গ্লোবাল সাউথ তৈরি করেনি। কিন্তু সেগুলি আমাদের অনেক বেশি প্রভাবিত করেছে। আমরা এটা দেখতে পেয়েছি কোভিড অতিমারী, জলবায়ু পরিবর্তন, সন্ত্রাসবাদ ও এমনকি ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবের মধ্য দিয়ে এবং এর সমাধান খুঁজতে আমাদের ভূমিকা অথবা আমাদের কন্ঠস্বরের গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

মহোদয়গণ,

ভারত চিরকাল তার উন্নয়নের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছে দক্ষিণ গোলার্ধের আমাদের ভাইদের সঙ্গে। আমাদের উন্নয়নের অংশীদারিত্ব ছড়িয়ে আছে ভুগোলের সর্বত্র এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে। অতিমারীর সময় আমরা ১০০-র বেশি দেশকে ওষুধ এবং টিকা সরবরাহ করেছি। আমাদের অভিন্ন ভবিষ্যতকে নির্ধারণ করতে উন্নয়নশীল দেশগুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ভারত সব সময় এগিয়ে এসেছে।

মহোদয়গণ,

এ বছর যখন ভারত জি-২০-র সভাপতিত্ব শুরু করছে, এটা স্বাভাবিক যে আমাদের লক্ষ্য হবে দক্ষিণ গোলার্ধের কন্ঠস্বরকে বাড়িয়ে তোলা। আমাদের এই জি-২০ সভাপতিত্ব আমাদের বেছে নেওয়া থিম হল – ‘ওয়ান আর্থ, ওয়ান ফ্যামিলি, ওয়ান ফিউচার’। এটি আমাদের সভ্যতার মূল সুরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমাদের বিশ্বাস, ঐক্য অর্জন করা যাবে মানব-কেন্দ্রিক উন্নয়নের মাধ্যমে। উন্নয়নের ফল থেকে দক্ষিণ গোলার্ধের মানুষকে বেশিদিন বঞ্চিত রাখা যাবে না। আমাদের একসঙ্গে চেষ্টা করতে হবে আন্তর্জাতিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রশাসনের খোলনলচে বদলে দেওয়া। এতে অসাম্য দূর হবে, সুযোগ বৃদ্ধি পাবে, উন্নয়নকে সহায়তা করা যাবে এবং প্রগতি ও উন্নতি ছড়িয়ে পড়বে।

মহোদয়গণ,

বিশ্বকে নতুন করে জাগিয়ে তুলতে আমাদের একসঙ্গে একটি আন্তর্জাতিক কর্মসূচির ডাক দিতে হবে। সেটি হল – ‘রেসপন্ড, রেকগনাইজ, রেসপেক্ট অ্যান্ড রিফর্ম’ : একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং ভারসাম্যের আন্তর্জাতিক কর্মসূচি তৈরি করে দক্ষিণ গোলার্ধের অগ্রাধিকারকে প্রাধান্য দেওয়া। সমস্ত আন্তর্জাতিক সমস্যার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য অভিন্ন কিন্তু বিভিন্ন ধারার দায়দায়িত্বকে চিহ্নিতকরণ। সমস্ত দেশের সার্বভৌমত্ব, আইনের শাসন এবং মতভেদের শান্তিপূর্ণ সমাধানকে সম্মান জানানো ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান যেমন রাষ্ট্রসঙ্ঘের সংস্কার করা যাতে সেটি আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে।

মহোদয়গণ,

বিকাশশীল বিশ্ব নানা সমস্যার মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও আমি আশাবাদী যে আমাদের সময় এসে গেছে। এখন সময়ের দাবি একটি সরল, উচ্চ ধরনের এবং দীর্ঘস্থায়ী সমাধান খোঁজা যা আমাদের সমাজ এবং অর্থনীতিকে রূপান্তর করতে পারে। এই মনোভাব নিয়ে আমরা কঠিন সমস্যাগুলি – সে দারিদ্র্যই হোক, বিশ্বের স্বাস্থ্য পরিষেবাই হোক অথবা মানুষের ক্ষমতা বৃদ্ধিই হোক, তা অতিক্রম করতে পারি। গত শতাব্দীতে বিদেশি শাসনের বিরুদ্ধে আমরা একে অপরকে সাহায্য করেছিলাম। এই শতাব্দীতেও তা আমরা করতে পারি যাতে একটি নতুন বিশ্বধারার সৃষ্টি হয় যা আমাদের নাগরিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করবে। ভারত যেখানে সংযুক্ত সেখানে আপনাদের কন্ঠস্বরই ভারতের কন্ঠস্বর। আপনাদের অগ্রাধিকারই ভারতের অগ্রাধিকার। আগামী দু’দিনে এই ‘ভয়েস অফ গ্লোবাল সাউথ সামিট’ আটটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে। আমার বিশ্বাস, দক্ষিণ গোলার্ধের আমরা সবাই একসঙ্গে নতুন এবং সৃজনশীল ভাবনা দিতে পারে। এই ভাবনা জি-২০ বা অন্য মঞ্চে আমাদের কন্ঠস্বরের ভিত্তি হতে পারে। ভারতে আমরা প্রার্থনায় বলে থাকি – ‘आ नो भद्राः क्रतवो यन्तु विश्वतः’ । এর অর্থ হল বিশ্বের সমস্ত প্রান্ত থেকে মহান ধারণা যেন আমাদের কাছে আসে। ভয়েস অফ গ্লোবাল সাউথ সামিট আমাদের সংযুক্ত ভবিষ্যতের জন্য মহান ধারণা পাওয়ার একটি সম্মিলিত প্রয়াস।

মহোদয়গণ,

আমি আপনাদের ভাবনা-চিন্তা শোনার জন্য আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি। আপনাদের অংশগ্রহণের জন্য আমি আপনাদের আরও একবার ধন্যবাদ জানাই।

ধন্যবাদ!

PG/AP/DM/