Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

অরুণাচল প্রদেশে গ্রীন ফিল্ড বিমান বন্দর ‘দোন্যি পোলো’ এবং অন্যান্য উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

অরুণাচল প্রদেশে গ্রীন ফিল্ড বিমান বন্দর ‘দোন্যি পোলো’ এবং অন্যান্য উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ


নয়াদিল্লি,  ১৯  নভেম্বর, ২০২২

 

জয় হিন্দ।

জয় হিন্দ।

ভারত মাতার জয়।

ভারত মাতার জয়।

অরুণাচল প্রদেশের মাননীয় রাজ্যপাল শ্রী বি ডি মিশ্রাজি, এই রাজ্যের জনপ্রিয় যুব মুখ্যমন্ত্রী শ্রী পেমা খান্ডুজি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আমার সহকর্মী কিরন রিজিজুজি, অরুণাচল প্রদেশের উপ-মুখ্যমন্ত্রী শ্রী চৌনা মীনজি, মাননীয় সাংসদগণ, বিধায়কগণ, সম্মানিত মেয়র মহোদয়, অন্যান্য সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ আর আমার প্রিয় অরুণাচল প্রদেশের ভাই ও বোনেরা!

আমি অনেকবার অরুণাচল প্রদেশ এসেছি। যখনই এসেছি একটি নতুন প্রাণশক্তি, নতুন উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে ফিরে গেছি। কিন্তু আমি বলতে বাধ্য যে, অরুণাচল প্রদেশে এতবার এসেছি যে গুনলে ভুল হয়ে যেতে পারে কতবার এসেছি। কিন্তু এবারের অনুষ্ঠান সবচেয়ে বড়। আর সকাল সাড়ে ৯টায় প্রথমবার এত জনসমাগম দেখতে পাচ্ছি। অরুণাচল প্রদেশের বন্ধুর পার্বত্য এলাকাগুলি থেকে এতজন মানুষের এসে পৌঁছানো, তার মানে আপনাদের জীবনে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মের গুরুত্ব কতটা তা বোঝা যাচ্ছে। আর সেজন্যই আপনারা এত বড় সংখ্যায় আমাদেরকে আশীর্বাদ দিতে এসেছেন। 

ভাই ও বোনেরা,

অরুণাচল প্রদেশের জনগণের আত্মীয়তা ও আতিথেয়তা কখনও ভোলা যায় না। যাকেই দেখুন তিনি সব সময় হাসছেন। কখনও তাঁদের চেহারায় উদাসীনতা এবং নিরাশার ছাপ পরিলক্ষিত হয় না। আর রয়েছে তাঁদের অনুশাসনপ্রিয়তা। আমার মনে হয় কোন সীমান্ত প্রদেশের জনগণের কতটা অনুশাসনপ্রিয় হওয়া উচিত তা আমার অরুণাচল প্রদেশের প্রত্যেক বাড়িতে, প্রত্যেক পরিবারে, প্রত্যেক ব্যক্তির জীবনে পরিলক্ষিত হয়। 

আমাদের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডুজির নেতৃত্বে এই ডবল ইঞ্জিন সরকারের পরিশ্রম, উন্নয়নের জন্য দায়বদ্ধতা আজ অরুণাচল প্রদেশকে এই নতুন উচ্চতায় উচ্চতায় পৌঁছে দিচ্ছে। আমি পেমা খান্ডুজি আর তাঁর টিমের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।

আপনাদের হয়তো মনে আছে, আর একটু আগেই পেমা খান্ডুজি নিজেও তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন যে ২০১৯ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে এই বিমান বন্দরের শিলান্যাস করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। আর আপনারা সবাই জানেন যে, আমরা এমন একটি কর্মসংস্কৃতি এনেছি; যে উন্নয়ন প্রকল্পের শিলান্যাস আমরা করি তার উদ্বোধনও আমরাই করি। কোনো কাজকে আটকে রাখা, ঝুলিয়ে রাখা, বিভ্রান্ত করার সময় চলে গেছে। কিন্তু আমি একটি অন্য বিষয়ে কথা বলতে চাই। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমি এই বিমান বন্দরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলাম। তারপর ২০১৯এর মে মাসে এখানে নির্বাচন ছিল। তখন যত রাজনৈতিক ভাষ্যকার ছিলেন, তাঁদের চোখে পুরনো আমলের চশমা ঝোলানো ছিল। তাঁরা চিৎকার করতে শুরু করেন কিংবা লিখতে ও বলতে শুরু করেন যে এখানে বিমান বন্দর-টন্দর কিছুই হবে না। সামনে নির্বাচন তাই মোদী এখানে পাথর পুঁততে এসেছেন। আর শুধু এখানেই নয়, সারা দেশেই প্রত্যেকটি জিনিসকে, প্রত্যেক জিনিসের মধ্যে তাঁরা নির্বাচনী প্রচার দেখতে পান। প্রত্যেক জিনিসের পিছনে, যে কোনও ভালো কাজের পিছনে নির্বাচন আর নির্বাচনের রঙে রাঙিয়ে দেওয়ার ফ্যাশান হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

সেসব মানুষের বক্তব্যের প্রতি আজকের এই বিমান বন্দর উদ্বোধন একটি কড়া জবাব। এই রাজনৈতিক ভাষ্যকারদের প্রতি আমার অনুরোধ তাঁদেরকে আমি হাতজোড় করে প্রার্থনা করছি, যে ভাই এখন পুরনো চশমা খুলে নিন। এই দেশ নতুন উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে এগিয়ে চলেছে। সব কিছুকে রাজনীতির দাঁড়িপাল্লায় মাপা বন্ধ করুন। যে ভাষ্যকারেরা এই উন্নয়ন কর্মকে নির্বাচনী চাল বলতেন, আজ ৩ বছরের মধ্যেই তাঁরা আধুনিক রূপে আমাদের এই বিমান বন্দরটি গড়ে উঠতে দেখলেন। আর আমার সৌভাগ্য যে আপনাদের উপস্থিতিতে লক্ষ লক্ষ মানুষকে সাক্ষী রেখে এই বিমান বন্দর উদ্বোধন করলাম। এই অনুষ্ঠান দেখার জন্য সমগ্র অরুণাচল প্রদেশ আজ অনলাইনে যুক্ত হয়েছে, এটা অত্যন্ত গর্বের বিষয়।

আজ আমাদের এখানে কোনও নির্বাচন নেই। সামনে এখানে কোনও নির্বাচন আসছে না। তা সত্ত্বেও এখানে এই বিমান বন্দর ও অন্যান্য উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন হচ্ছে। কারণ আজ দেশে যে সরকার রয়েছে তার অগ্রাধিকার হল দেশের উন্নয়ন, দেশের জনগণের উন্নয়ন। বছরে ৩৬৫ দিন ২৪ ঘণ্টা আমরা দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করতে থাকি। আর আপনারা দেখছেন, এখন আমি ভারতে যে রাজ্যে প্রথম সূর্যোদয় হয় সেই অরুণাচল প্রদেশের ভূমিতে দাঁড়িয়ে আছি। আর এখান থেকে গিয়ে সন্ধ্যায় যেখানে সূর্য অস্ত যায়, ভারতের পশ্চিম প্রান্ত সেই দমনের ভূমিতে অবতরণ করবো। মাঝে অবশ্য কাশী হয়ে যাব। এই অক্লান্ত পরিশ্রম একটাই স্বপ্ন নিয়ে করে চলেছি, আপ্রাণ চেষ্টা করছি যাতে আমার দেশ এগিয়ে যায়। আমরা নির্বাচনের লাভ-লোকসানকে সামনে রেখে কাজ করি না। যাঁরা নির্বাচনে লাভবান হওয়ার জন্য কাজ করেন, তাঁরা ছোট ছোট ইচ্ছাপূরণের জন্য কাজ করেন। আমাদের স্বপ্ন হল শুধু এবং শুধু ভারতমাতার উন্নয়ন, ভারতের উন্নয়ন, ১৩০ কোটি নাগরিকের উন্নয়ন।

আজ এই বিমান বন্দর উদ্বোধনের পাশাপাশি এই মঞ্চ থেকে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কামেঙ্গ হাইড্রো প্রজেক্ট-এরও উদ্বোধন হল। এটাও একটি অনেক বড় সাফল্য। উন্নয়নের উড়ান এবং উন্নয়নের জন্য প্রাণশক্তি এই মেলবন্ধন অরুণাচল প্রদেশকে একটি নতুন গতিতে, নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। আমি এই সাফল্যের জন্য আমার অরুণাচল প্রদেশের ভাই ও বোনেদের, সমগ্র উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে বসবাসকারী ভাই ও বোনেদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই, অনেক অনেক শুভ কামনা জানাই। 

স্বাধীনতার পর উত্তরপূর্ব ভারত সম্পূর্ণ ভিন্ন রকমের অনাদরে অভ্যস্ত হয়েছে। ইতিহাস সাক্ষী রয়েছে, দশকের পর দশক ধরে এই বিশাল এলাকা উপেক্ষা এবং উদাসীনতার শিকার ছিল। তখন দিল্লিতে বসে নীতি প্রণয়নকারীদের একটাই চিন্তা ছিল যে কোনও ভাবে পরবর্তী নির্বাচনে জিতে আসা। আপনারা জানেন যে এই পরিস্থিতি অনেক দশক ধরে বজায় ছিল। যখন অটলজির নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার গড়ে ওঠে তারপরই প্রথমবার এই ধীমেতেতালকে বদলানোর চেষ্টা হয়েছে। আগের সরকারগুলি ভাবতো যে, অরুণাচল প্রদেশ এত দূরে অবস্থিত, উত্তরপূর্ব ভারত এত দূরে রয়েছে! দেশের প্রান্তিক ও সীমাবর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের আগে শেষ গ্রামের মানুষ বলে মনে করা হত। কিন্তু আমাদের সরকার তাঁদেরকে শেষ গ্রামের মানুষ বলে ভাবে না। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিকে আমরা প্রান্তিক গ্রাম বলে মনে করি না। এগুলিকে আমরা দেশের প্রথম গ্রাম বলে মনে করি। আর সেগুলিকে সবচেয়ে উন্নত গ্রামে পরিণত করার জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছি। ফলস্বরূপ, উত্তরপূর্ব ভারতের উন্নয়ন আজ দেশের অগ্রাধিকারে পরিণত হয়েছে।

এখন ‘কালচার’ থেকে শুরু করে ‘এগ্রিকালচার’, ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে যোগাযোগ ব্যবস্থা সব ক্ষেত্রেই উত্তরপূর্ব ভারতকে অন্তিম নয়, সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। ব্যাবসা-বণিজ্য থেকে শুরু করে পর্যটন, টেলি-কমিউনিকেশন থেকে শুরু করে বস্ত্রশিল্প- সমস্ত ক্ষেত্রেই উত্তর পূর্ব ভারতকে প্রান্তিক না ভেবে, সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। ড্রোন প্রযুক্তি থেকে শুরু করে ‘কৃষি উড়ান’ পর্যন্ত, বিমান বন্দর থেকে শুরু করে নদী বন্দর এবং উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে দেশ এখন উত্তরপূর্ব ভারতকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। 

ভারতের দীর্ঘতম সেতু নির্মাণ থেকে শুরু করে দীর্ঘতম রেল রোড ব্রিজ নির্মাণ, রেললাইন পাতা থেকে শুরু করে রেকর্ড পরিমাণ দ্রুত গতিতে মহাসড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে দেশ উত্তর পূর্ব ভারতকে সবার আগে স্থান দিয়েছে। এর পরিণামে আজ উত্তরপূর্ব ভারতে সুযোগের নতুন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, নতুন যুগ শুরু হয়েছে। 

আজকের এই আয়োজন নতুন ভারতের এই দৃষ্টিকোনের অনেক উজ্জ্বল উদাহরণ। দোন্যি পোলো বিমান বন্দর অরুণাচল প্রদেশে চতুর্থ ‘অপারেশনাল’ বিমান বন্দর। স্বাধীনতার পর থেকে বিগত ৭ দশকে গোটা উত্তরপূর্ব ভারতে মাত্র ৯টি বিমান বন্দর ছিল। আর আমাদের সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মাত্র ৮ বছরে আরও ৭টি নতুন বিমান বন্দর গড়ে তুলেছে। এখানে এ রকম অনেক এলাকা রয়েছে যেগুলি স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর বিমান যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। এর ফলে এখন উত্তরপূর্ব ভারতে যাতায়াতের সুবিধা বাড়ানোর জন্য উড়ানের সংখ্যাও দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। 

বন্ধুগণ,

ইটানগরের এই দোন্যি পোলো বিমান বন্দর অরুণাচল প্রদেশের অতীত এবং সংস্কৃতিরও সাক্ষী হয়ে উঠছে। আর আমাকে বলা হয়েছে, একটু আগে পেমাজিও বলছিলেন, যে ‘ডন্যি’ শব্দটির মানে হল সূর্য। আর চাঁদকে বলা হয় ‘পোলো’। আমি অরুণাচল প্রদেশের দোন্যি পোলোকে সংস্কৃতি উন্নয়ের ক্ষেত্রে একটি শিক্ষা রূপে দেখছি। আলোর উৎস একটাই, কিন্তু সূর্যের আলোর তেজ আর চাঁদের আলোর শীতলতা আমাদের জীবনে এই দুয়েরই ভিন্ন ভিন্ন গুরুত্ব রয়েছে, ভিন্ন ভিন্ন সামর্থও রয়েছে। ঠিক তেমনভাবেই যখন আমরা উন্নয়নের কথা বলি তখন বড় বড় প্রকল্প থেকে শুরু করে গরিব মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া জনকল্যাণ প্রকল্পগুলি পর্যন্ত উভয়ই উন্নয়নের প্রয়োজনীয় মাত্রা যুক্ত করে। 

আজ বিমান বন্দর গড়ে তোলার মতো বড় বড় পরিকাঠামো উন্নয়নের গুরুত্ব যতটা রয়েছে, ততটাই গুরুত্ব রয়েছে গরিব মানুষের সেবার, আর তাঁদের স্বপ্নগুলি বাস্তবায়নের। আজ যখন বিমান বন্দর গড়ে উঠেছে এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ কীভাবে লাভবান হবেন এই দিকটা দেখার জন্য ‘উড়ান যোজনা’-র কর্মযজ্ঞ এগিয়ে চলেছে। 

বিমান পরিষেবা শুরু হওয়ার পর এই এলাকায় পর্যটকদের সংখ্যা কীভাবে বাড়ানো যায়, কীভাবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন, ছোট ছোট দোকানদার, ট্যাক্সি ড্রাইভাররা কীভাবে উপকৃত হবেন এই দিকটা দেখার দায়িত্ব নিয়ে কাজ এগিয়ে চলেছে। 

বন্ধুগণ,

অরুণাচল প্রদেশে আজ দুর্গম থেকে দুর্গমতর উচ্চতায় আন্তর্জাতিক সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে নতুন নতুন সড়ক পথ এবং মহাসড়ক গড়ে উঠছে। কেন্দ্রীয় সরকার সড়কগুলি নির্মাণের জন্য আরও প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা খরচ করতে চলেছে। যখন পরিকাঠামো এতো উন্নত হবে, তখন বড় সংখ্যায় পর্যটকও আসবে। অরুণাচল প্রদেশের প্রত্যেক এলাকাকে প্রকৃতি এতো অসাধারণ সৌন্দর্য্য দিয়ে সাজিয়েছে যে এই রাজ্যের প্রত্যেক গ্রামে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। ‘হোম-স্টে’ ব্যবস্থাপনা এবং স্থানীয় পণ্য বিক্রির মাধ্যমে প্রত্যেক পরিবারের আয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। এর জন্য প্রয়োজন হল প্রত্যেক গ্রামে পৌঁছানোর ব্যবস্থাকে সুগম করা। সেজন্য আজ অরুণাচল প্রদেশে ৮৫ শতাংশেরও বেশি গ্রামে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার মাধ্যমে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। 

বন্ধুগণ,

বিমান বন্দর এবং উন্নত পরিকাঠামো গড়ে ওঠার পর অরুণাচল প্রদেশে ‘কার্গো’ পরিষেবা গড়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এর মাধ্যমে এখানকার কৃষকদের উৎপাদিত ফসল তাঁরা অরুণাচল প্রদেশের বাইরে বড় বাজারগুলিতে সহজেই বিক্রি করতে পারবেন। তাহলে তাঁরা আজকের তুলনায় অনেক গুণ বেশি টাকা রোজগার করবেন। অরুণাচল প্রদেশের কৃষকরা পিএম কিষাণ সম্মান নিধির মাধ্যমেও অনেক উপকৃত হচ্ছেন। 

বন্ধুগণ,

উত্তরপূর্ব ভারতের হিতে আমাদের সরকার কীভাবে কাজ করছে তার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল বাঁশ-চাষকে নতুন দৃষ্টিতে দেখা। বাঁশ এখানকার জীবনশৈলীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। আজ সমগ্র দেশ তথা বিশ্বে বাঁশ থেকে উৎপাদিত নানা পণ্য জনপ্রিয় হচ্ছে। কিন্তু ইংরেজদের সময় থেকে বাঁশ কাটার ওপর এমনসব আইনী বাধা-নিষেধ ছিল যে আমাদের উত্তরপূর্ব ভারতের বিভিন্ন জনজাতি গোষ্ঠীর ভাই বোনেরা নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হতেন। সেজন্য আমরা উদ্যোগ নিয়ে সেই আইনে পরিবর্তন এনেছি। এখন আপনারা যেমন বাঁশ চাষ করতে পারেন তেমনি বাঁশ কাটতে পারেন এবং বিক্রি করতে পারেন। নানা রকম মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে নানা বাঁশজাত পণ্য খোলা বাজারে বাণিজ্য করতে পারেন। যেমন অন্যান্য ফসল ফলান তেমনি বাঁশও ফলাতে পারেন। 

ভাই ও বোনেরা,

গরিবরা যত জীবনের বুনিয়াদি চিন্তাগুলি থেকে মুক্ত হন ততই তাঁরা নিজেদের পাশাপাশি দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রেও নতুন মাত্রা যোগ করতে থাকেন। সেজন্য আজ দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর ব্যক্তিকে উপেক্ষা ও দূরবস্থা থেকে বের করে আনা তাঁদের গরিমাময় জীবনযাত্রার মান সুনিশ্চিত করায় দেশের সরকারের অগ্রাধিকার। আগে বলা হত যে পার্বত্য অঞ্চলে সর্বদাই শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার সংকট থাকে। কিন্তু এখন ভালো স্বাস্থ্য পরিষেবার পাশাপাশি আয়ুষ্মান ভারত যোজনার মাধ্যমে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। প্রত্যেক গরিব পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে পাকা বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে জনজাতি এলাকাগুলিতে কেন্দ্রীয় সরকার ৫০০ কোটি টাকা খরচ করে একলব্য মডেল স্কুল খুলছে, যাতে কোনো জনজাতি সম্প্রদায়ের শিশু পড়াশোনায় পিছিয়ে না পড়ে।

যে যুবক-যুবতীরা কোনো কারণে হিংসার পথ বেছে নিয়েছিল, তাদেরকে একটি ভিন্ন নীতির মাধ্যমে মূল ধারায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের জন্য স্বতন্ত্র তহবিল গঠন করা হয়েছে। স্টার্টআপ ইন্ডিয়ার শক্তির সঙ্গে যুক্ত করার জন্য ‘অরুণাচল স্টার্টআপ পলিসি’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে অরুণাচল প্রদেশকেও দেশের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পথ খুলে দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ উন্নয়নের যত কর্মকান্ড ওপর থেকে শুরু হয় তা আজ দেশের গ্রামে গ্রামে গরিব যুবক-যুবতীদের কাছে পৌঁছে দিয়ে তাঁদের সামর্থ বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে।

বন্ধুগণ,

২০১৫ সালের পর থেকে কেন্দ্রীয় সরকার দেশের প্রত্যেক গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ পৌঁছে দেওয়ার অভিযান শুরু করেছে। অরুণাচল প্রদেশের প্রত্যেকটি গ্রাম এই অভিযানের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছে। এই রাজ্যের এমন অনেক গ্রামে স্বাধীনতার পর এই প্রথম বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। এরপর কেন্দ্রীয় সরকার ‘সৌভাগ্য যোজনা’র মাধ্যমে প্রত্যেক বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের অভিযান শুরু করেছে। এই অভিযানের মাধ্যমে আমার অরুণাচল প্রদেশের কয়েক হাজার বাড়িতেও বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। আর যখন এ রাজ্যের বাড়িতে বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে তখন শুধু বাড়িগুলি আলোর রোশনাইয়ে উজ্জ্বল হয়নি, এখানকার সাধারণ মানুষের জীবনেও ঔজ্জ্বল্য এসেছে। 

ভাই ও বোনেরা,

অরুণাচল প্রদেশে এখন যে গতিতে উন্নয়ন হচ্ছে, তা আমাদের প্রতিটি গ্রামে প্রত্যেক বাড়িতে মিশন মোডে কাজ করার সুযোগ তৈরি করেছে। আমরা চেষ্টা করছি, যাতে সীমাবর্তী গ্রামগুলিকে ‘ভাইব্রেন্ট বর্ডার ভিলেজ’-এর মর্যাদা দিয়ে সেগুলিকে আরও শক্তিশালী করা যায়। যখন সীমাবর্তী প্রত্যেক গ্রামে সম্ভাবনার নতুন নতুন দরজা খুলবে, সেখান থেকেই সমৃদ্ধির সূত্রপাত হবে। 

এবার ‘ভাইব্রেন্ট বর্ডার ভিলেজ’ প্রোগ্রামের মাধ্যমে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলি থেকে সাধারণ মানুষের পলায়ন প্রতিহত করতে সেই গ্রামগুলিতে পর্যটন পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। আমাদের সরকার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে বসবাসকারী ছাত্রছাত্রীদের এনসিসি-র সঙ্গে যুক্ত করার একটি বিশেষ অভিযান শুরু করেছে। এর মাধ্যমে সীমান্তবর্তী প্রত্যেক গ্রামের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীকে এনসিসি-র সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা চলছে। এনসিসি-র সঙ্গে যুক্ত হওয়া এই ছাত্রছাত্রীদের সেনা আধিকারিকরা প্রশিক্ষণ দেবেন। এর ফলে এই ছাত্রছাত্রীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথ যেমন গড়ে উঠবে পাশাপাশি তাঁদের মনে দেশ সেবার একটা আকাঙ্খাও বৃদ্ধি পাবে। 

বন্ধুগণ,

‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’-এর মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে চলা আমাদের ডবল ইঞ্জিন সরকার অরুণাচল প্রদেশের উন্নয়নের জন্য জনগণের ‘ইজ অফ লিভিং’ বৃদ্ধিতে দায়বদ্ধ। কামনা করি, উন্নয়নের এই সূর্য এভাবেই এই রাজ্যে তার কিরণ ছড়িয়ে দিতে থাকবে। 

আমি আর একবার পেমা খান্ডুজি এবং তাঁর সরকারের সম্পূর্ণ টিমকে কেন্দ্রীয় সরকারের এইসব প্রকল্পগুলিকে সফলভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্রিয় সহযোগিতা প্রদানের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আমাদের উত্তরপূর্ব ভারতের সমস্ত বন্ধুদেরকে, এই রাজ্যগুলির সমস্ত মা ও বোনদেরকে আমি অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। 

আমার পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভ কামনা, অনেক অনেক ধন্যবাদ!

PG/SB/ NS