Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

রাজ্যগুলির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীদের ‘চিন্তন শিবির’-এ প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

রাজ্যগুলির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীদের ‘চিন্তন শিবির’-এ প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ


নয়াদিল্লি, ২৮ অক্টোবর ২০২২

 

রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীদের ‘চিন্তন শিবির’-এ ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে আজ প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ভাষণ দেন।

ভাষণ দিতে গিয়ে উৎসবের মরশুমে শান্তিপূর্ণ পরিবেশের জন্য আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে সাধুবাদ জানান তিনি। তিনি বলেন যে ‘চিন্তন শিবির’ হল সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর এক অনন্য উদাহরণ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইন-শৃঙ্খলা যদিও সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যের বিষয়, তবুও দেশের ঐক্য এবং সংহতির সঙ্গে তা সম্পৃক্ত। শ্রী মোদী বলেন, “প্রত্যেক রাজ্য প্রত্যেকের কাছ থেকে শিখুক, প্রত্যেকের কাছ থেকে উৎসাহ নিক, দেশের উন্নতিকল্পে কাজ করুক – এটাই হল সংবিধানের ভাবধারা এবং এটাই দেশবাসীর প্রতি আমাদের দায়িত্ব।”

অমৃতকালের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অমৃতকালে ‘পঞ্চপ্রাণ’-এর মূলগত ভাবধারাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এক অমৃত প্রজন্মের উদ্ভব হবে। সুশাসনের জন্য ‘পঞ্চপ্রাণ’ই হবে নির্ণায়ক শক্তি।

শ্রী মোদী বলেন, দেশের শক্তি যখন বৃদ্ধি পাবে তখন দেশের প্রত্যেকটি নাগরিক এবং প্রত্যেকটি পরিবারের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, “সুশাসন হল তাই, যেখানে প্রত্যেক রাজ্য, এমনকি সেখানকার শেষ প্রান্তে থাকা মানুষের কাছেও সুযোগ-সুবিধা পৌঁছতে পারে।” রাজ্যের উন্নয়ন এবং আইন-শৃঙ্খলার মধ্যে সমন্বয়ের ওপরে প্রধানমন্ত্রী গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, “সামগ্রিক আইন-শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্যতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনগণের মধ্যে এর ধারণা এবং এর ওপর বিশ্বাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে এনডিআরএফ এবং এসডিআরএফ-এর বাড়তে থাকা পরিচয়ের উল্লেখ করেন তিনি। শ্রী মোদী বলেন যে কোনো অপরাধ যখন সংগঠিত হয়, সেখানে পুলিশ পৌঁছনো মানে সরকার এসে পৌঁছনো এবং করোনা মহামারীর সময় পুলিশের সম্মান বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। পুলিশের শক্তি বৃদ্ধি করার প্রয়োজনীয়তার প্রশ্নে দ্বিমতের কোনো অবকাশ নেই এবং এই লক্ষ্যে তাদেরকে পরিচালিত করা আমাদের নিরন্তর প্রয়াস হওয়া উচিৎ।

প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে অপরাধ এখন আর আঞ্চলিক এবং আন্তঃরাজ্য ঘটনা নয়, বরং আন্তর্জাতিক স্তরেও তা বেড়ে চলেছে। এই কারণে কেন্দ্র এবং রাজ্যের সংস্থাগুলির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। তিনি উল্লেখ করেন যে সাইবার অপরাধই হোক অথবা মাদক বা অস্ত্র চোরাচালানের জন্য ড্রোন প্রযুক্তির ব্যবহার – এই সমস্ত অপরাধের মোকাবিলা করতে নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগের ব্যাপারে সরকারকে নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যেতে হবে। শ্রী মোদী উল্লেখ করেন, “স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করা সম্ভব।” তিনি বলেন, ৫জি পরিষেবার সূচনা অনেক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে চলেছে। সেক্ষেত্রে আইন রক্ষকদের আরও সতর্ক হয়ে ওঠার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তিনি মুখ্যমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীদের এই প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তাকে বাজেট বরাদ্দের সীমাবদ্ধতার মধ্যে আটকে না রেখে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে তার কারণ তা সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তা সংক্রান্ত আস্থা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকারের ‘পুলিশ প্রযুক্তি মিশন’-এর উল্লেখ করেন। বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার হওয়ায় একটি অভিন্ন প্ল্যাটফর্মের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। “আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হোক গোটা ভারতের জন্য, যাতে আমরা উৎকৃষ্ট ব্যবহারিক দিকগুলি অন্যান্যদের সাথে ভাগ করে নিতে পারি এবং একটি অভিন্ন যোগসূত্র যাতে সেখানে থাকে” – বলে তিনি মন্তব্য করেন। রাজ্যের সংস্থাগুলিকে ফরেন্সিক বিজ্ঞানে তাদের সক্ষমতা আরও বাড়ানোর জন্য তিনি বলেন এবং গান্ধীনগরের ন্যাশনাল ফরেন্সিক সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটি-র সুবিধা তাদের গ্রহণ করতে বলেন।

সংস্কারের ওপর আলোকপাত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত কয়েক বছরে আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে অনেক সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে যার ফলে দেশে একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, “আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা হল ২৪X৭ বিষয়।” এর সঙ্গে যে প্রক্রিয়া জড়িত তার উন্নতিসাধনের কাজ করে যাওয়ার দরকার বলে শ্রী মোদী উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই লক্ষ্যে কোম্পানি আইনের অনেকগুলি দিককে ফৌজদারি বিধির বাইরে রাখা হয়েছে। কালবাহ্য আইন এবং নিয়মকানুনকে নতুন করে মূল্যায়ন করার ব্যাপারে তিনি রাজ্যগুলিকে অনুরোধ জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার যে আইন এনেছে তা দুর্নীতি, সন্ত্রাস এবং হাওলাকে কঠোর হস্তে রোধ করবে। তিনি বলেন, “ইউএপিএ-র মতো আইন এই ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একটা নির্ণায়ক লড়াই করতে সাহায্য করছে।”

প্রধানমন্ত্রী সমাবেশে বলেন, সমগ্র দেশজুড়ে সব রাজ্যের পুলিশের একই পোশাক হওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা উচিৎ। এতে সারা দেশে আইন বলবৎ করার ক্ষেত্রে নিযুক্ত পুলিশকর্মীদের একটি অভিন্ন পরিচয় তৈরি হবে। ‘এক রাষ্ট্র, এক পুলিশ পোশাক’-এ রাজ্যগুলির একটা নিজস্ব স্মরণিকা থাকতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটি আমি আপনাদের বিবেচনার ওপর ছেড়ে দিলাম।” এর পাশাপাশি তিনি পর্যটন সম্পর্কিত নীতির ক্ষেত্রে বিশেষ সক্ষমতা গড়ে তোলার বিষয়টি বিবেচনা করতে বলেন। তিনি বলেন, যে কোনো জায়গাতেই পর্যটকরা হল সেখানকার সম্মান এগিয়ে যাওয়ার সবথেকে বড় দূত। বিভিন্ন স্পর্শকাতর বিষয়ের গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে একটি আন্তরিকতার ছোঁয়া থাকাটা দরকার। অতিমারীর সময় মানুষকে সাহায্য করতে, বিশেষত প্রবীণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন তিনি। প্রযুক্তির সঙ্গে মানবিক বুদ্ধিমত্তার বিষয়টিকে উপেক্ষা করা যায় না বলে তিনি মন্তব্য করেন। ভারতের উত্থানের সঙ্গে যে সমস্ত চ্যালেঞ্জগুলি জড়িয়ে আছে সে ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার ওপর প্রধানমন্ত্রী আলোকপাত করেন।

সামাজিক মাধ্যমের সম্ভাবনার ওপর আলোকপাত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে এর ওপর কোনো সীমারেখা টেনে দেওয়া সম্ভব নয় তার কারণ তা তথ্যের সূত্র। তিনি বলেন, একটা সাধারণ ভুয়ো খবরও তড়িৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে যা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী হয়ে দেখা দিতে পারে। অতীতে চাকরিতে সংরক্ষণ সংক্রান্ত ভুয়ো খবর ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে অনেক নিরপরাধ মানুষের জীবনহানি ঘটেছিল। কোনো একটা খবর অন্যকে দেওয়ার আগে তার প্রকৃত বিশ্লেষণ এবং পর্যালোচনা করে দেখার জন্য মানুষকে শিক্ষিত করে তোলার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। তিনি বলেন, “ভুয়ো খবর ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ করতে উন্নত প্রযুক্তিকে নিয়ে আসতে হবে।” দেশে অসামরিক প্রতিরক্ষার ওপর আলোকপাত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে পুলিশ এবং দমকল বাহিনী স্কুল এবং কলেজ স্তরে যদি অনুশীলনের ব্যবস্থা করে তাহলে ছাত্রছাত্রীরাও এক্ষেত্রে সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয়ে উঠতে পারে।

সন্ত্রাসবাদের নেটওয়ার্ককে ভেঙে দিতে প্রত্যেক রাজ্যের সরকারকে তার গুরুত্ব বুঝে তা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। শ্রী মোদী বলেন, একত্রে সমন্বয়ের ভিত্তিতে করাই হল সময়ের চাহিদা। তিনি বলেন, “নকশালবাদের যে কোনো স্বরূপ, তা সে বন্দুক বা কলম যা নিয়েই হোক, তাকে নির্মূল করতে হবে যাতে দেশের যুব সম্প্রদায় বিপথে চালিত না হয়।” আগামী প্রজন্মের মানসিকতাকে দূষিত এই সমস্ত শক্তিগুলি তাঁদের বৌদ্ধিক ক্ষেত্রকে আরও বেশি করে ব্যবহার করছে বলে প্রধানমন্ত্রী সতর্ক করেন। দেশের ঐক্য ও সমন্বয়ের জন্য সর্দার প্যাটেলের আদর্শ মেনে এই সমস্ত বিভেদকামী শক্তিগুলি যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে, সে বিষয়ে আবেদন জানান শ্রী মোদী। তিনি বলেন যে এই সমস্ত শক্তিগুলি বাইরে থেকে অনেক সাহায্য পেয়ে থাকে।

গত আট বছরে দেশে নকশাল প্রভাবিত জেলাগুলির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “জম্মু-কাশ্মীর হোক অথবা উত্তর-পূর্বাঞ্চল – আজ আমরা সর্বত্রই স্থায়ী শান্তির লক্ষ্যে এগোচ্ছি। পরিকাঠামো সহ যাবতীয় ক্ষেত্রের দ্রুত উন্নয়নের প্রতি আমাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।” পরিযায়ী মানুষদের ফিরিয়ে আনতে সীমান্ত এলাকা এবং উপকূলবর্তী এলাকাগুলির উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকার নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। তিনি বলেন যে এইসব এলাকাগুলিতে অস্ত্র এবং মাদক চোরাচালান বন্ধ করতে এটি সুদূরপ্রসারী ভূমিকা নিতে পারে। এই পরিকল্পনা সম্পাদনের জন্য সীমান্ত এবং উপকূলবর্তী রাজ্যগুলিতে আরও বৃহত্তর সমন্বয়ের ভিত্তিতে কাজ করার কথাও বলেন তিনি।

ভাষণ শেষে, বছরের পর বছর ধরে পুলিশের মহানির্দেশকদের সম্মেলনে যে সমস্ত মতামতগুলি উঠে এসেছে তা গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে বলেন তিনি। নতুন স্ক্র্যাপেজ পলিসির ফলে পুলিশ বাহিনীকে তাদের গাড়িগুলির বিষয়টি নতুন করে পর্যালোচনা করতে বলেন তিনি। শ্রী মোদী বলেন, “পুলিশের গাড়িকে কখনই পুরনো হতে দেওয়া যাবে না কারণ তা তাঁদের দক্ষতার সঙ্গে জড়িত।”

তিনি জোর দিয়ে বলেন, জাতীয় প্রেক্ষাপট সামনে রেখে আমরা যদি এগোই তাহলে কোনো চ্যালেঞ্জই আমাদের সামনে বড় হয়ে দেখা দিতে পারে না। “এই ‘চিন্তন শিবির’ থেকে উন্নত পরামর্শের একটি রোডম্যাপ আমাদের সামনে আসবে। আমি আপনাদের সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই” বলে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণ শেষ করেন।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, হরিয়ানার সুরজকুণ্ডে ২০২২-এর ২৭ এবং ২৮ অক্টোবর এই ‘চিন্তন শিবির’ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রাজ্যগুলির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এবং পুলিশের মহানির্দেশক, কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনীর মহানির্দেশক এবং কেন্দ্রীয় পুলিশ সংস্থাগুলি এতে যোগ দিয়েছে। এই শিবিরে পুলিশবাহিনীর আধুনিকীকরণ, সাইবার অপরাধ ব্যবস্থাপনা এবং অপরাধ ন্যায়বিচার ব্যবস্থা, তথ্যপ্রযুক্তি অধিকতর ব্যবহার, স্থল সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, উপকূল নিরাপত্তা, মহিলাদের নিরাপত্তা, মাদক চোরাচালান রোধ প্রভৃতি বিষয়ে নিয়ে আলোচনা হবে। রাজ্যগুলির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীদের এই ‘চিন্তন শিবির’-এ প্রধানমন্ত্রী তাঁর স্বাধীনতার দিবসের ভাষণে যে ‘পঞ্চপ্রাণ’-এর কথা বলেছিলেন তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে একটি জাতীয় প্রেক্ষাপট তৈরির একটি প্রয়াস। সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর এক আদর্শ স্বরূপ হল এই শিবির। কেন্দ্র, রাজ্য এবং বিভিন্ন অংশীদারদের মধ্যে আরও সুসমন্বিত পরিকল্পনা রচনা করবে এই শিবির।

 
PG/AB/DM