Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

গুজরাটের মোধেরায় বিবিধ উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

গুজরাটের মোধেরায় বিবিধ উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ


নয়াদিল্লি, ০৯ অক্টোবর, ২০২২

আজ মোধেরা তথা মেহসানা ও সমগ্র উত্তর গুজরাটের জন্য উন্নয়নের নতুন প্রাণশক্তি সঞ্চারিত হ’ল। বিদ্যুৎ – জল সরবরাহ থেকে শুরু করে সড়ক – রেলপথ নির্মাণ, ডেয়ারী শিল্প থেকে শুরু করে দক্ষতা উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অনেক প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস আজ হয়েছে। কয়েক হাজার কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগে নির্মিত ও নির্মীয়মান এই প্রকল্পগুলি অসংখ্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে, কৃষক ও পশুপালকদের আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে আর এই গোটা এলাকাতে ঐতিহ্য পর্যটন বা হেরিটেজ ট্যুরিজম সংক্রান্ত বিভিন্ন পরিষেবাকে বিস্তৃত করবে। আপনাদের সকলকে এই উন্নয়ন প্রকল্পগুলির জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আমার মেহসানার প্রিয় জনগণকে প্রণাম।

বন্ধুগণ,

আজ যখন আমরা ভগবান সূর্যের ধাম মোধেরাতে রয়েছি আর সংযোগবশত আজ ‘শরদ পূর্ণিমা’ পাশাপাশি, আজ মহর্ষী বাল্মীকীজীর পুণ্য জন্মতিথি। অর্থাৎ, এক প্রকার ত্রিবেণী সঙ্গম! মহর্ষী বাল্মীকী আমাদের ভগবান রামের মহান জীবনকে দর্শন করিয়েছেন, সাম্যের বার্তা দিয়েছেন। আপনাদের সকলকে ও সমগ্র দেশবাসীকে শরদ পূর্ণিমা ও বাল্মীকী জয়ন্তী উপলক্ষে অনেক অনেক শুভকামনা!

ভাই ও বোনেরা,

বিগত কিছুদিন ধরে আপনারা হয়তো ক্রমাগত বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে, খবরের কাগজে, সোশ্যাল মিডিয়ায় এই মোধেরায় সূর্যগ্রাম নিয়ে খবর ও আলোচনা শুনেছেন। অনেকে বলছেন যে, এটা অকল্পনীয়, অন্যরা বলছেন, আমাদের চোখের সামনে আজ স্বপ্ন সফল হচ্ছে। কেউ বলছেন, আমাদের চির পুরাতন আস্থা এবং আধুনিক প্রযুক্তির একটি নতুন সঙ্গম। আবার কেউ একে ভবিষ্যতের স্মার্ট গুজরাট স্মার্ট ভারতের ঝলক বলে আখ্যা দিয়েছেন। এটি আজ আমাদের সকলের জন্য গোটা মেহসানা সমগ্র গুজরাটের জন্য গৌরবের মুহূর্ত নিয়ে এসেছে। আমি মোধেরাবাসী, চাণস্মাবাসী তথা মেহসানাবাসীদের জিজ্ঞেস করছি যে, আপনারা বলুন, এর ফলে আমাদের সকলের মাথ উঁচু হ’ল কিনা। আপনাদের জীবনে, আপনাদের চোখের সামনে কিছু হওয়ার আনন্দ পেয়েছেন কিনা। আগে বিশ্ববাসী মোধেরাকে সূর্য মন্দিরের কারণেই জানতেন। কিন্তু, এখন মোধেরার এই সূর্য মন্দির থেকে প্রেরণা নিয়ে মোধেরা যে সূর্যগ্রামও হয়ে উঠতে পারে, আর এই উভয়ই একসঙ্গে বিশ্বে নতুন পরিচয় তৈরি করবে, বিশ্বের পরিবেশবিদদের মানচিত্রে মোধেরা একটি স্বতন্ত্র স্থান করে নেবে।

বন্ধুগণ,

এটাই গুজরাটের সামর্থ। গুজরাটের প্রত্যেক প্রান্তে এই সামর্থই আজ মোধেরায় পরিলক্ষিত হচ্ছে। কে ভুলতে পারে যে, এই মোধেরার সূর্য মন্দিরকে ধ্বংস করার জন্য আক্রমণকারীরা কত চেষ্টা করেছে। এই মোধেরার জনগণের উপর অনেক অত্যাচার হয়েছে। আর আজ এখানেই পৌরাণিকতার পাশাপাশি, আধুনিকতার জন্য বিশ্ববাসীর সামনে একটি উদাহরণ হিসাবে মোধেরা গড়ে উঠছে।

ভবিষ্যতে যখনই বিশ্বের যে কোনও জায়গায় সৌরশক্তি নিয়ে আলোচনা হবে তখনই সবার আগে মোধেরার নাম উচ্চারিত হবে। কারণ, এখানে সবকিছু সৌরশক্তির মাধ্যমে চলছে। প্রত্যেক বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ, প্রত্যেক কৃষকের চাষের প্রয়োজনে বিদ্যুৎ, এমনকি গাড়িও বিদ্যুৎ চালিত করার চেষ্টা চলছে। একবিংশ শতাব্দীর আত্মনির্ভর ভারতের জন্য আমাদের জ্বালানীর প্রয়োজন মেটাতে এ ধরনের প্রচেষ্টা আরও বাড়াতে হবে।

বন্ধুগণ,

আমি গুজরাট তথা সমগ্র দেশে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সন্তান-সন্ততিদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে, দিন-রাত পরিশ্রম করে দেশকে সেই লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। সেই দিন আর দূরে নেই, যখন সারা দেশের মানুষ আমার এই মোধেরার ভাই-বোনদের মতো বলবেন যে, এখন আমাদের ছাদেই বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়, আর সরকার থেকে আমরা টাকাও পাই। শুধু বিনামূল্যে বিদ্যুৎ নয়, মোধেরার জনগণ এখন ছাদে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সরকার থেকে টাকাও পান। প্রয়োজন অনুসারে, বিদ্যুৎ ব্যবহার করুন। আর অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরকারকে বিক্রি করে দিন। এতে বিদ্যুৎ বিলে যেমন সাশ্রয় হবে, তেমনই বিদ্যুৎ বিক্রি করে উপার্জনও হবে।

সমাজের উপর নাগরিকরা কোনও বোঝা হবেন না। আর যাঁরা বোঝা নন, তাঁরা সমাজের উন্নতির জন্য যদি পরিশ্রম করেন, তা থেকে তাঁরা প্রভূত উপার্জনও করতে পারেন। আমাদের পূর্বজরা আমাদের যে শিষ্টাচার শিখিয়ে গেছেন, তা ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করে আমাদের অন্যতম পিছিয়ে পড়া জেলা মেহসানাকে আমাদের পরিশ্রমের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে আসতে আমরা কখনও পিছপা হইনি।

বন্ধুগণ,

আগে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন করতো আর জনগণ তা কিনতেন। কিন্তু, আমি সেই পথে এগিয়ে যেতে চাই, যেখানে জনগণ তাঁদের ছাদে সোলার প্যানেল বসাবেন, কৃষকরা তাঁদের ক্ষেতের আলে সোলার প্যানেল বসাবেন, আর এই বিদ্যুৎ দিয়েই বাড়ি-ঘর এবং সৌর পাম্প চলবে। আগে আমাদের হর্স পাওয়ারের জন্য আন্দোলন করতে হ’ত। আর এখন আপনাদের ক্ষেতের আলে যে ২ মিটার জমি কাজে লাগতো না, সেটি ব্যবহার করে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে আপনাদের পাম্প চলছে, ক্ষেতে জল পৌঁছচ্ছে আর অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরকার কিনে নিচ্ছে। এর মানে এই পুরো চক্রটাই আমরা বদলে দিয়েছি। সেজন্য সরকার সৌরশক্তিকে উৎসাহ যোগাতে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে, লক্ষ লক্ষ সোলার পাম্প বিতরণ করছে।

আমার সামনে যে ২০-২২ বছর বয়সী যুবক-যুবতীরা দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁরা হয়তো খুব একটা অবহিত নন যে, আমাদের এই মেহসানা জেলার অবস্থা আগে কেমন ছিল। বিদ্যুৎ অপ্রতুল ছিল, বিদ্যুৎ নিয়ে খবরের কাগজে লেখা হ’ত। জলের জন্য আমাদের মেয়েদের ৩-৪ কিলোমিটার দূরে মাথায় কলসি নিয়ে যেতে হ’ত। উত্তর গুজরাটের সেই দিনগুলির সমস্যা আমরা অতিক্রম করে এসেছি। এখন যারা স্কুল-কলেজে পড়ছে, তারা শুনে আশ্চর্য হবে যে, মেহসানা আগে এরকম ছিল।

বন্ধুগণ,

আমরা কেমন পরিস্থিতিতে থাকতাম, তা আপনারা পূর্বজদের সঙ্গে কথা বললে জানতে পারবেন। বিদ্যুৎ ছাড়াও অনেক সমস্যা ছিল। আর বিদ্যুতের অভাবে বাড়িতে টিভি, পাখা ইত্যাদি যেমন ঠিক মতো ব্যবহার করা যেত না। তেমনই পড়াশুনার ক্ষেত্রেও অনেক প্রতিবন্ধকতা আসতো। আর কৃষি ক্ষেত্রে সেচের জন্য সমস্যার পাহাড় ছিল। আমাদের মেহসানা জেলার জনগণ প্রাকৃতিকভাবে গণিত ও বিজ্ঞানে এগিয়ে। আমেরিকায় যান, দেখবেন, গণিত ও বিজ্ঞানে অনেক মেধাবী মানুষ, যাঁরা উত্তর গুজরাট থেকে গেছেন। কচ্ছের যে কোনও জায়গায় যান, দেখবেন যে, গণিত ও বিজ্ঞানের মাস্টার মশাইরা সব মেহসানা জেলার লোক। যদি তাঁদের এই মেধার সঙ্গে বিদ্যুৎ, জল ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পেতেন, তা হলে তাঁরা আজ সাফল্যের শিখরে পৌঁছতেন।

আজকের প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের বলতে চাই, আপনাদের সামনে অনেক সুযোগ। শুধু তাই নয়, এখানকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এত ভালো যে, মেয়ের বিয়েতে আমেদাবাদ থেকে বাজার করে ফিরতে পারবেন, শান্তিতে ফিরতে পারবেন – এমন দিন কিন্তু আগে ছিল না। ছেলেমেয়েরা জন্মের পর নিজের কাকা-মামার নাম না জানলেও পুলিশ আধিকারিকদের নাম জানতো। কারণ, তাঁরা ছোটবেলা থেকেই পুলিশ আধিকারিকদের বাড়ির সামনে দাঁরিয়ে থাকতে দেখেছে। কার্ফিউ শব্দের সঙ্গেও তারা পরিচিত ছিল। কিন্তু গত ২০-২২ বছরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এতটাই ভালো হয়েছে যে, নবীন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা হয়তো কার্ফিউ শব্দটাই শোনেনি। গত দু’দশকে আপনারা উন্নয়ন বিরোধিতার আবহকে নস্যাৎ করে আমাদের উপর বিশ্বাস রেখেছেন। ভাই ও বোনেরা, এজন্য গুজরাটের কোটি কোটি জনগণকে আমি নতমস্তকে অভিবাদন জানাই।

ভাই ও বোনেরা,

এটা আপনাদের সদিচ্ছার ফলেই সরকার এবং জনগণ মিলে একটা নতুন ইতিহাস রচিত হয়েছে। আপনারা কখনও আমার জাত দেখেননি, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট দেখেননি, চোখ বন্ধ করে আমাকে আশীর্বাদ দিয়েছেন। আপনাদের মাপকাঠি একটাই ছিল, আপনারা আমার কর্মদক্ষতা দেখেছেন। শুধু আমার নয়, আমার দলের, আমার সঙ্গীদের আপনারা আশীর্বাদ দিয়ে গেছেন। আর আপনাদের আশীর্বাদ যত বেড়েছে, আমাদের জন্য কাজ করার প্রেরণা ও শক্তি ততটাই বেড়েছে।

বন্ধুগণ,

কোনও পরিবর্তন এমনি এমনি আসে না, এর জন্য দূরদৃষ্টি চাই। আজ মেহসানাবাসী সাক্ষী রয়েছেন, সম্পূর্ণ গুজরাটের উন্নয়নের স্বার্থে আমরা যে পঞ্চ শক্তির ভিত্তিতে কাজ করছি, তার সাক্ষী। আমি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, তখন অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের বলতাম, আমার রাজ্যের অনেক বড় বাজেট জলের জন্য খরচ করতে হয়। প্রতি ১০ বছরের মধ্যে ৭ বছরই খরার মুখোমুখী হতে হয়। সেজন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে আমরা যখন পঞ্চামৃত প্রকল্প নিয়ে এসেছিলাম, তখন গুজরাটকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিই। কারণ, আমি জানতাম, জল আর বিদ্যুৎ ঠিক মতো না পেলে গুজরাট ধ্বংস হয়ে যাবে।

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমার মনে আর যে চিন্তাগুলি ছিল, তা হল, তাদের শিক্ষা। বয়স্কদের জন্য স্বাস্থ্য, সমস্ত গুজরাটবাসীর জন্য উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা। ব্যবসায় গুজরাট এগিয়ে থাকলেও কৃষি ক্ষেত্রে গুজরাট সবচেয়ে পিছিয়ে ছিল। এটা আমি মেনে নিতে পারতাম না। গুজরাট কখনও কোনও কিছুতে পিছিয়ে থাকতে পারে না। সেজন্য গুজরাটে কৃষির উন্নতিতে আমরা নজর দিই, পরিকাঠামো উন্নয়নে নজর দিই, উন্নত সড়কপথ, রেলপথ, বিমানবন্দর এবং আনুষঙ্গিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলি। এই উন্নয়নের গতি আর থামবে না, এগিয়ে যাবে। কারণ এই পরিকাঠামো উন্নয়নের হাত ধরে গুজরাটে এখন অনেক নতুন নতুন শিল্প আসছে। পর্যটন শিল্প উন্নত হচ্ছে। এভাবে গুজরাটের সার্বিক উন্নয়ন আজ পরিলক্ষিত হচ্ছে।

আপনারা দেখুন, স্ট্যাচু অফ ইউনিটি ইতিমধ্যেই কত বিখ্যাত হয়েছে। আজ আমেরিকায় স্ট্যাচু অফ লিবার্টি দেখতে যত লোক যান, তার চেয়ে অনেক বেশি পর্যটক আমাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের চরণ বন্দনা করতে গুজরাটে আসেন। আর এখন এই সূর্যগ্রাম এর ফলে আপনাদের চোখের সামনে মোধেরা পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হবে বন্ধুগণ। আপনাদের শুধু সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে কোনও পর্যটক এখান থেকে হতাশ হয়ে না ফেরেন। তাঁরা যদি হাসি মুখে ফিরে যান, তা হলে দেখবেন পর্যটক আসা গুণীতক হারে বৃদ্ধি পাবে।

বন্ধুগণ,

এভাবে গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছতে আর ২৪X৭ ঘন্টা বিদ্যুৎ ব্যবস্থা আমি সবার আগে ঊঁঞ্ঝা গ্রাম থেকে শুরু করেছিলাম। সেখানে যে জ্যোতিগ্রাম প্রকল্প নির্মাণ করেছিলাম, আমাদের নারায়ণ কাকা সেখানে বসেছিলেন। তিনি জানতেন, সেই সময়টা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সমস্ত গুজরাটবাসী তার সাক্ষী ছিল। আমরা ঠিক করেছিলাম যে, সারা বছর ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সুনিশ্চিত করব। আর এই অভিযান আমরা ১ হাজার দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ করে দেখিয়েছি। আর আপনাদের কাজ থেকে এই কাজের পদ্ধতি শিখে আমি যখন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেলাম, তখন সারা দেশের জন্য প্রয়োগ করলাম। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়ে আমি দেখলাম যে, দেশের ১৮ হাজার গ্রামে তখনও বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। তখন আমি বললাম, ১ হাজার দিনের মধ্যে এই ১৮ হাজার গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেব। আর আপনারা শুনলে খুশি হবেন যে, আপনাদের গুজরাটের এই সন্তান তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে ১৮ হাজার গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে।

আমার মনে আছে যে, ২০০৭ সালে একটি জলের প্রকল্প উদ্বোধনের জন্য আমি এখানে ডেডিয়াসণে এসেছিলাম। আর তখন আমি বলেছিলাম যে, গুজরাটে জলের জন্য যত প্রচেষ্টা আমরা করছি, তার মূল্য আজ বোঝা যাবে না। ১৫ বছর পর আজ সকলে এর গুরুত্ব বুঝতে পারছেন। টিভিতে দেখতে পারছেন। গত ১৫ বছর ধরে আমরা জলের জন্য যে লড়াই করেছি, তার সুফল আজ আমাদের গুজরাটকে শস্য শ্যামলা করে করে দিয়েছে। আর আমার মা-বোনদের মুখে আসি ফুটেছে। এটাই জলের শক্তি। আমরা ‘সুজলাং সুফলাং’ প্রকল্পের কাজকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে গেছি। আর ‘সুজলাং সুফলাং ক্যানেল’ তৈরি করেছি। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন ও এই নালা খননের জন্য আমি গুজরাটের কৃষকদের কাছে কৃতজ্ঞ। তাঁদের সহযোগিতায় আইন-আদালতের অনেক ঝামেলা থেকে লুপ্ত থাকা গেছে। এর জন্য যত জমি দরকার ছিল, কৃষকরা স্বেচ্ছায় সেটা দিয়েছেন। দেখতে দেখতে ‘সুজলাং সুফলাং ক্যানেল’ তৈরি হয়ে যায়। নদীর জল আজ এই ক্যানেলের মাধ্যমে উত্তর গুজরাটের কৃষি ক্ষেতে পৌঁছে যাচ্ছে। আর সেইসব ক্ষেত এখন তিন ফসলী হয়ে উঠেছে।

আজ এখানে বেশ কিছু জল সংক্রান্ত প্রকল্পের শিলান্যাসের সৌভাগ্য আমার হয়েছে। ভিসনগর, আমার গ্রাম ভডনগর, আমাসদের হেরালু তালুকের অধিকাংশ মানুষ এই জল প্রকল্পের মাধ্যমে উপকৃত হবেন। এই গ্রামগুলির মা ও বোনেরা উপকৃত হবেন। পশু পালন ও কৃষি আরও উন্নত হবে। পশু পালন তো আমাদের মেহসানার পরিচয়। একটু আগেই অশোকভাই আমাকে বলছিলেন যে, ১৯৬০ সালের পর আমরা এ বছর ডেয়ারিতে রেকর্ড পরিমাণ লাভের মুখ দেখেছি। সেজন্য আমি আমার উত্তর গুজরাটের পশুপালকদের অভিনন্দন জানাই। আপনারা পশু পালন ডেয়ারিগুলিকে এমন মানুষদের হাতে সমর্পণ করেছেন যে, চুরি ও দুর্নীতি দূর হয়েছে। ফলস্বরূপ, এর লভ্যাংশ আপনারাও পাচ্ছেন।

ভাই ও বোনেরা,

আপনার তো সেই দিন দেখেছেন, যখন বছরের পর বছর খরায় জলের অভাবে পশু খাদ্যের অভাবে আমাদের কৃষি প্রভাবিত হ’ত। ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রেনে করে আমাদের পশুখাদ্য আনাতে হ’ত। খবরের কাগজে হেডলাইন হ’ত। আজকের ২০-২২ বছর বয়সী ছেলেমেয়েরা এইসব সমস্যার কথা জানে না। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও যেন এ নিয়ে কোনও পরোয়া না করতে হয়, সেজন্য আমাদের আত্মতৃপ্তিতে ভুগলে চলবে না। এখন যেভাবে কাজ করছি, তারচেয়ে গুণ বেশি কাজ করতে হবে।

বিদ্যুৎ ও জল থাকলে, শিল্পোন্নয়ন হলে, কৃষি ও দুধ উৎপাদন বাড়লে মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে জায়গায় জায়গায় ফুড পার্ক গড়ে ওঠাও স্বাভাবিক। আর এফপিও-গুলির কাজ বাড়ছে। আমাদের মেহসানা এখন ওষুধ উৎপাদন, প্লাস্টিক, সিমেন্ট, কারিগরি সরঞ্জামের বড় বড় শিল্পোদ্যোগ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। আপনা মান্ডাল, বেচরাজি স্পেশাল ইনভেস্টমেন্ট রিজিয়ন ইত্যাদি গড়ে ওঠার পর এখানে অটোমোবাইল শিল্পোদ্যোগ বিকশিত হয়েছে। জাপানী কোম্পানিগুলি তাদের গাড়ি এখানকার কারখানাগুলিতে উৎপাদন করছে, এখানে বিনিয়োগ করছে। গুজরাটের যুবক-যুবতীদের বুদ্ধি ও ঘামকে কাজে লাগিয়ে জাপানী গাড়ি ও সাইকেল এখান থেকেই উৎপাদিত হচ্ছে। মেট্রোর কোচ উৎপাদিত হচ্ছে। আর সেইদিন দূরে নেই, যখন আপনারা দেখতে পাবেন এই গুজরাটের মাটিতে এরোপ্ল্যানও তৈরি হবে।

এখানেই সুজুকি কোম্পানির ১০০টিরও বেশি ছোট ছোট যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী কোম্পানী আছে। আপনারা ভাবুন, পরিবর্তিত বিশ্বকে এখন বিদ্যুৎ চালিত যানবাহন আপন করে নেওয়া ছাড়া কোনও উপায় নেই। আর এক্ষেত্রে ভারতের সবচেয়ে বড় কর্মযজ্ঞ চলছে আমাদের মা বেচোরাজীর চরণতলে। আমাদের হানসলপুরে লিথিয়াম আয়রণ নির্মাণ প্ল্যান্ট গড়ে উঠেছে। এজন্য আমাদের হানসলপুরের কৃষকদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকতে হবে। যখন এই সুজুকি কোম্পানিকে আমি গুজরাটের মুখ্য হিসাবে আমন্ত্রণ জানিয়ে এনেছিলাম, তখন আমাদের বিরোধীরা হানসলপুরের কৃষকদের ভুল বুঝিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিল। অথচ, এখানকার কৃষি জমি এমন ছিল যে, এখানে বাজরাও উৎপাদিত হ’ত না। আর খরার সময় তো কিছুই হ’ত না। হানসলপুরের কৃষকরা দল বেঁধে গান্ধীনগরে গিয়ে আমার কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে, মুর্দাবাদ মুর্দাবাদ বলেছে।

আমি তাঁদের সকলকে সমাদর করে ভেতরে ডাকি, তাঁদের অভিযোগগুলি শুনি, আর বলি, আপনারা না চাইলে আমি আপনাদের থেকে জমি নেব না, অন্য জায়গা থেকে নেব। তখন তাঁদের মধ্যে ৫-৭ জন বুদ্ধিমান ব্যক্তি আমাদের বিরোধীদের রাজনীতিটা বুঝতে পারেন। তাঁরাই আমাকে অনুরোধ করেন, যাতে সুজুকি কোম্পানীকে অন্য কোথাও না নিয়ে যাই। আন্দোলন বন্ধ হয়। আর আজ শিল্প ক্ষেত্র হিসাবে এই অঞ্চল কত উন্নত হয়ে উঠেছে, সেই কৃষকরা নিজেরাও অনেক লাভবান হয়েছেন। আর গোটা মেহসানা উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে।

ভাই ও বোনেরা,

আপনারা ভাবুন, এখানে ওয়েস্টার্ন ফ্রেইট করিডর ও দিল্লি-মুম্বাই ফ্রেইট করিডর – এর কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এর ফলে, এই এলাকা ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসাবে নিজস্ব পরিচয় গড়ে তুলছে। শুধু তাই নয়, লজিস্টিক গুদামজাতকরণের ক্ষেত্রে এই এলাকার সম্ভাবনা ক্রমবর্ধমান। নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও গড়ে উঠছে।

বন্ধুগণ,

বিগত দু’দশক ধরে আমরায যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। আর এখন তো আমাদের ডবল ইঞ্জিন সরকার, নরেন্দ্রভাই আর ভূপেন্দ্রভাই দু’জনের নেতৃত্বাধীন সরকার একসঙ্গে কাজ করছে। সেজন্য গতি এখন অনেক বেড়ে গেছে। আপনারা দেখুন, আজ থেকে ৯০-৯৫ বছর আগে ১৯৩০ সালে ইংরেজরা একটি পরিকল্পনা করেছিল। মেহসানা – অম্বাজী – তারঙ্গা – আবুরোড রেললাইন সম্প্রসারণের প্রস্তাব ছিল। কিন্তু, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যাঁরা ক্ষমতায় আসেন, তাঁরা গুজরাটের উন্নয়নকে কোনও গুরুত্বই দেননি। সেই প্রকল্প ফাইল বন্দী হয়ে থাকে। আপনারা শুনলে খুশি হবেন, এবার আমি সেই রেললাইন চালু করার প্রকল্পের শিলান্যাস করলাম। আপনারা কল্পনা করতে পারেন, এই রেললাইন যখন চালু হবে, তখন এই এলাকার চেহারাটাই বদলে যাবে। এই রেললাইন আর্থিকভাবে এই অঞ্চলকে সমৃদ্ধ করে তুলবে।

বন্ধুগণ,

বহুচরাজী থেকে মোধেরা হয়ে চাণস্মা সড়ক আগে এক লেনের ছিল, এখন চারলেনে পরিণত হয়েছে। আগে যখন এখানে আসতাম, তখন কত কষ্ট সহ্য করতে হ’ত। আপনাদের কি মনে আছে, নাকি ভুলে গেছেন। এই সড়কপথ চারলেন হওয়ার ফলে উন্নয়নের গতি বেড়েছে, দক্ষতা উন্নয়ন, আরোগ্য – সবক্ষেত্রেই এই এলাকার মানুষ উন্নত পরিষেবা পাচ্ছেন। সর্দার সাহেবের স্মৃতিতে গড়ে ওঠা একটি সংস্থায় সরকারি আধিকারিক ও কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে এখানকার যুবক-যুবতীদের দক্ষতা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের জন্য গুজরাট সরকারকে আমি অভিনন্দন জানাই। অভিনন্দন জানাই ভাবনগরের মেডিকেল কলেজ গড়ে তোলার জন্যও। আগে একাদশ শ্রেণী পাশ করার পর এখানকার মেধাবী ছেলেমেয়েরা কোথায় পড়াশুনা করতে যাবে – এই বিষয়টি নিয়েও অনিশ্চয়তা ছিল। এখন এই মেডিকেল কলেজ চালু হওয়ার ফলে তাদের চিকিৎসা শিক্ষার পাশাপাশি, এই জেলার মানুষ আধুনিক স্বাস্থ্য পরিষেবা পাচ্ছেন। আগামী দিনে আমাদের ডবল ইঞ্জিন সরকার এই কর্মযজ্ঞকে আরও সম্নপ্রসারিত করবে।

বন্ধুগণ,

আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, প্রধানমন্ত্রী জন ঔষধি কেন্দ্র এই এলাকার জনগণকে সুলভে জীবনদায়ী ওষুধ সরবরাহ করছে। অসুস্থ ও বৃদ্ধ নাগরিকদের যেখানে ১ হাজার টাকার ওষুধ কিনতে হ’ত, এখন তাঁরা সেই ওষুধ ১০০-২০০ টাকায় পাচ্ছেন জেনেরিক ওষুধ। ৮০০ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। আপনারা লাভবান হচ্ছেন।

এই এলাকায় পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা অনুভব করে আমরা এই বিষয়টিকেও অগ্রাধিকার দিয়েছি। ভাবনগরে খনন কার্যের মাধ্যমে কয়েক হাজার পুরনো অনেক স্থাপত্য ও ভাস্কর্য্য জনসমক্ষে উঠে এসেছে। আমাদের কাশী যেমন অবিনশ্বর, ভাবনগরও তেমনই বিগত ৩ হাজার বছর ধরে কল্লোলিনী ছিল। এখন বিশ্ববাসী এসে সেইসব দেখবেন। সূর্য মন্দিরের পাশাপাশি, আমাদের সূর্যগ্রামকেও দেখবেন। বহুচরাজীর তীর্থ ভ্রমণ করবেন। আমাদের উমিয়া মাতা আমাদের সতেরো লিঙ্গ তলাব, আমাদের রানী কী বাও, আমাদের তারঙ্গা পাহাড়, আমাদের রুদ্র মহালয়, বডনগরের তোরণ – এই পুরো এলাকায় একবার বাস নিয়ে যাত্রীরা বেরিয়ে পড়লে দু-তিন ধরে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে পড়বেন। আমাদের এই এলাকাগুলিতে পর্যটক অনুকূল পরিকাঠামো আরও উন্নত করতে হবে।

বন্ধুগণ,

বিগত দু’দশক ধরে আমরা সততার সঙ্গে এখানকার মন্দির, শক্তিপীঠ ইত্যাদি অধ্যত্ম বিস্তারে এর সৌন্দর্য্য পুনরুদ্ধারে কাজ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে গেছি। সোমনাথ থেকে শুরু করে চটিলা, পাওয়াগড় ইত্যাদি পুনরুদ্ধার করেছি। পাওয়াগড়ের মন্দিরে বিগত ৫০০ বছর ধরে কোনও পতাকা ওড়েনি। কিছু দিন আগে আমি ৫০০ বছর পর পতাকা উড়িয়ে দিয়েছি। এখন অম্বাজী কত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, উজ্জ্বল। আমাকে বলা হয়েছে যে, আজ রাতে অম্বাজীতে কয়েক হাজার মানুষ একসঙ্গে শরদ পূর্ণিমা উপলক্ষে একসঙ্গে আরতী দেবেন।

ভাই ও বোনেরা,

গিরনার থেকে শুরু করে পালিতানা, বহুচরাজী থেকে শুরু করে সমস্ত তীর্থস্থানে এমন অসাধারণ পুনরুদ্ধারের কাজ হচ্ছে যে, এখন গুজরাট ভারত ও বিশ্বের পর্যটকদের জন্য আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে। আর পর্যটকরা এলে তো সকলেরই মঙ্গল হবে বন্ধুগণ। আর আমাদের ডবল ইঞ্জিন সরকারের মন্ত্র হ’ল – ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিসওয়াস এবং সবকা প্রয়াস’। সূর্য কিরণের মতো আমরা উন্নয়নে আলোকে ছড়িয়ে দিতে চাই। সূর্য যেমন কোনও বৈষম্য করে না, আমাদের উন্নয়নকেও আমরা প্রত্যেকের বাড়িতে পৌঁছে দিতে চাই। গরীবের কুঁড়েঘর পর্যন্ত উন্নয়নের আলো পৌঁছে দেওয়ার জন্য আপনাদের আশীর্বাদ চাই। আমাদের টিমকে আপনারা আশীর্বাদ করুন। আমাদের ঝুলিতে আশীর্বাদ ভরে দিন ভাই ও বোনেরা, যাতে আমরা গুজরাটের উন্নয়নকে দৃষ্টান্তমূলক জায়গায় পৌঁছে দিতে পারি। আপনাদের সকলকে আরেকবার অনেক অনেক শুভ কামনা, অনেক অনেক অভিনন্দন। ধন্যবাদ।

ভারতমাতার জয়,

ভারতমাতার জয়,

একটু জোরে বলুন, মেহসানা যেন কোনও ক্ষেত্রে পিছিয়ে না থাকে।

দু’হাত উপরে তুলে বলুন,

ভারতমাতার জয়, ভারতমাতার জয়, ভারতমাতার জয়,

ধন্যবাদ।

বিঃদ্রঃ : প্রধানমন্ত্রী এই ভাষণটির অধিকাংশই গুজরাটি ভাষায় দিয়েছেন, এটি তার বঙ্গানুবাদ।

PG/SB/SB