Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

প্রধানমন্ত্রী আমেদাবাদে ৩৬তম জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সূচনা করেছেন

প্রধানমন্ত্রী আমেদাবাদে ৩৬তম জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সূচনা করেছেন


নয়াদিল্লি, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ আমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে ৩৬তম জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সূচনা করেছেন। এই অনুষ্ঠানে তিনি দেসার-এ আন্তর্জাতিক মানের ‘স্বর্ণিম গুজরাট ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয়’-এর উদ্বোধন করেন এবং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা খেলোয়াড়দের উদ্দেশে ভাষণ দেন।
উপস্থিত খেলোয়াড়দের প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সকলের মধ্যে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। সাত হাজারের বেশি খেলোয়াড়, ১৫ হাজারের বেশি অংশগ্রহণকারী দেশের ৩৫ হাজারেরও বেশি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্কুল থেকে এসেছেন। এই প্রতিযোগিতার সঙ্গে ৫০ লক্ষের বেশি ছাত্রছাত্রী যুক্ত হয়েছেন যা অনবদ্য। “পৃথিবীর বৃহত্তম স্টেডিয়ামে বিশ্বের তরুণ এক রাষ্ট্রের সবথেকে বড় ক্রীড়া উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে! যখন কোনো অনুষ্ঠান এত সুন্দরভাবে আয়োজন করা হয়, তখন তার ফলাফল অভূতপূর্ব হতে বাধ্য।” তিনি এই প্রসঙ্গে জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য সঙ্গীত ‘জুড়েগা ইন্ডিয়া – জিতেগা ইন্ডিয়া’ থেকে কয়েকটি অংশ উদ্ধৃত করেন। স্টেডিয়ামে উপস্থিত সকলে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, উপস্থিত ক্রীড়াবিদদের মধ্যে যে আস্থা প্রতিফলিত হচ্ছে তা আগামীদিনে ভারতীয় ক্রীড়া জগতকে যে সুবর্ণ যুগে পৌঁছে দেবে, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত।  স্বল্প সময়ের মধ্যে এ ধরনের একটি বড় ক্রীড়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করার জন্য শ্রী মোদী গুজরাটবাসীর প্রশংসা করেন।
আমেদাবাদে গতকাল যে ড্রোন প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল তার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই প্রদর্শনী সকলকে গর্বিত করেছে। “ড্রোনের মতো প্রযুক্তির এ ধরনের যথাযথ ব্যবহার গুজরাট এবং ভারতকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে।” ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ম্যাসকট এশীয় সিংহ ‘সাওয়াজ’-এর মধ্য দিয়ে ভারতীয় যুব সম্প্রদায়ের নির্ভীক মানসিকতায় অংশগ্রহণের মনোভাব প্রতিফলিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের উত্থানও অনুভূত হচ্ছে।
এই স্টেডিয়ামের বৈশিষ্ট্যের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অন্যান্য কমপ্লেক্সে কয়েকটি মাত্র খেলার সুযোগ থাকে কিন্তু, সর্দার প্যাটেল স্পোর্টর্স কমপ্লেক্সে ফুটবল, হকি, বাস্কেটবল, কাবাডি, বক্সিং এবং লন টেনিস সহ বিভিন্ন খেলার সুযোগ রয়েছে। “এক কথায় বলা যায়, এটি সারা দেশের কাছে আদর্শ হয়ে উঠেছে। যখন উন্নতমানের পরিকাঠামো নিশ্চিত করা হয় তখন খেলোয়াড়দের মনোবল তুঙ্গে ওঠে।” জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়দের নবরাত্রি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই উৎসব মা দুর্গার আরাধনার মধ্যে আর সীমাবদ্ধ নেই। এখানে গরবা-র মতো আনন্দঘন অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া যায়। “এই উৎসবের নিজস্বতা রয়েছে।”
শ্রী মোদী জাতীয় জীবনে খেলাধূলার গুরুত্বের প্রসঙ্গটি উল্লেখ করেন। “ক্রীড়াক্ষেত্রে খেলোয়াড়দের জয়লাভ এবং তাঁদের অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্য অন্যান্য ক্ষেত্রেও দেশকে বিজয়ের পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। ক্রীড়া জগতের সুপ্ত শক্তি দেশের পরিচিতি এবং ভাবমূর্তিকে বহুগুণ বৃদ্ধি করে।” তিনি বলেন, “আমি ক্রীড়া জগতের সঙ্গে যুক্ত আমার বন্ধুদের সব সময়েই বলে থাকি, চেষ্টার মধ্য দিয়ে সাফল্যের সূচনা হয়। যে মুহূর্ত থেকে আপনি লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে যাবেন, তখন থেকেই সাফল্যও সূচিত হবে। আপনি যদি এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতাকে পরিত্যাগ না করেন তাহলে জয়লাভ নিশ্চিত।”
গত আট বছর ধরে খেলাধুলা জগতের অগ্রগতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে ভারত একশোরও কম আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করত, আর এখন এই সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়ে গেছে। “আট বছর আগে ভারতের খেলোয়াড়রা ২০-২৫ রকমের খেলায় অংশগ্রহণ করতেন, আর এখন প্রায় ৪০ রকমের খেলায় ভারতীয় খেলোয়াড়রা অংশগ্রহণ করেন। ফলে, ভারতের পদক জয়ের সংখ্যাও বাড়ছে।”
করোনার কঠিন সময়কালে আমাদের খেলোয়াড়দের মনোবল যাতে ভেঙে না পড়ে তার জন্য সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। “আমরা খেলোয়াড়োচিত মানসিকতায় ক্রীড়াক্ষেত্রে কাজ করে চলেছি। টপস-এর মতো বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্য দিয়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। আজ নামী খেলোয়াড়দের সাফল্য ভবিষ্যতের নতুন খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করবে। তাই, টপস এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।” শ্রী মোদী বলেন, এ বছরের টোকিও অলিম্পিক্সে ভারতীয় খেলোয়াড়রা সবথেকে ভালো ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছেন। ব্যাডমিন্টনে থমাস কাপ জয় সকলকে খেলাধুলার বিষয়ে আরও উৎসাহিত করেছে। তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ভিন্নভাবে সক্ষম খেলোয়াড়দের সাফল্যেরও প্রশংসা করেন। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় মহিলা ক্রীড়াবিদদের সমান এবং শক্তিশালী অংশগ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্রীড়াক্ষেত্রের এই সাফল্য আগেই আসা সম্ভব ছিল কিন্তু, ভারতের ক্রীড়া জগতে পেশাদারিত্বের পরিবর্তে দুর্নীতি এবং স্বজনপোষণের কারণে সেই সম্ভাবনা নষ্ট হয়। “আমরা এই অনিয়মগুলিকে দূর করেছি এবং যুব সম্প্রদায়ের স্বপ্ন পূরণের জন্য তাদের মনে আস্থা গড়ে তুলেছি।” নতুন ভারতের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ এখন আর শুধুমাত্র নীতি প্রণয়নের মধ্যেই নিজেকে আবদ্ধ রাখতে চায় না, দেশের যুব সম্প্রদায় এগিয়ে যেতে চায়। ফিট ইন্ডিয়া এবং খেলো ইন্ডিয়ার মতো উদ্যোগগুলি আজ জন-আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, গত আট বছরে দেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে বাজেটের পরিমাণ প্রায় ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে, খেলোয়াড়দের জন্য আরও অর্থ বরাদ্দ করা সম্ভব হয়েছে এবং তাঁরা নতুন নতুন সুযোগকে কাজে লাগাতে পেরেছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয়, উন্নত ক্রীড়া পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবসরপ্রাপ্ত খেলোয়াড়দের জীবনযাত্রাকে আরও সহজ করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতা থেকে যাতে নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়রা উপকৃত হন সেই লক্ষ্যে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির ইতিহাসের কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, পুরুষানুক্রমে খেলাধুলা ভারতের সংস্কৃতির অঙ্গ এবং হাজার হাজার বছর ধরে এই সংস্কৃতি লালিত হচ্ছে। “স্বাধীনতার অমৃতকালে দেশ গর্বের সঙ্গে সেই ঐতিহ্যকে আবারও চর্চা করছে।” আজ শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট খেলা নিয়ে দেশে চর্চা হচ্ছে না, ‘কালারিপায়াত্তু’ ও যোগাসনের মতো ভারতীয় খেলাগুলি নিয়েও চর্চা শুরু হয়েছে। “জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মতো বড় আয়োজনে এই খেলাগুলি অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি।” যাঁরা প্রতিযোগিতায় এই খেলাগুলিতে অংশগ্রহণ করবেন তাঁদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি নির্দিষ্ট করে আপনাদের জন্য কয়েকটি কথা বলতে চাই। একাধারে আপনারা হাজার হাজার বছরের একটি সংস্কৃতিকে বহন করছেন, অন্যদিকে ভবিষ্যতের ক্রীড়া জগতকে নেতৃত্বও দিচ্ছেন। আগামীদিনে যখন এই খেলাগুলি আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃতি পাবে, তখন আপনারা কিংবদন্তী হিসেবে বিবেচিত হবেন।”
তাঁর ভাষণের শেষে প্রধানমন্ত্রী খেলোয়াড়দের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা যদি প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করতে চান তাহলে ধারাবাহিকতাকে বজায় রেখে প্রতিশ্রুতি পালনের বিষয়টিও আপনাদের শিখতে হবে।” খেলোয়াড়োচিত মানসিকতার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোনো খেলায় হার-জিৎ থাকেই কিন্তু তা কখনই চূড়ান্ত হতে পারে না। ভারতের মতো তরুণ প্রতিভাপূর্ণ একটি রাষ্ট্রের স্বপ্ন তখনই পূরণ হবে যখন আপনাদের জীবনে খেলোয়াড়োচিত মানসিকতা অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত থাকবে। “মনে রাখবেন, যখন কোনো অভিযান শুরু হবে, তখনই বিকাশ নিশ্চিত হবে। আপনাদের এই ধারাবাহিকতাকে বজায় রাখতে হবে। এটিই হবে আপনাদের জীবনের মূল লক্ষ্য। আমি নিশ্চিত, জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় আপনাদের বিজয় দেশ যেমন উদযাপন করবে, একইভাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যেও নতুন আস্থার সঞ্চার হবে।”
অনুষ্ঠানে গুজরাটের রাজ্যপাল শ্রী আচার্য দেবব্রত, মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল, কেন্দ্রীয় ক্রীড়া ও যুব বিষয়ক মন্ত্রী শ্রী অনুরাগ সিং ঠাকুর, সাংসদ শ্রী সি আর পাটিল, গুজরাটের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী শ্রী হর্ষ সাংভি, আমেদাবাদের মেয়র শ্রী কিরিত পারমার সহ বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।
 
পটভূমিকা
গুজরাটে এই প্রথম জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত এই প্রতিযোগিতায় প্রায় ১৫ হাজার খেলোয়াড়, প্রশিক্ষক এবং আধিকারিক অংশগ্রহণ করবেন। দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা খেলোয়াড়রা ৩৬ রকমের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করবেন। আমেদাবাদ, গান্ধীনগর, সুরাট, ভদোদরা, রাজকোট এবং ভাবনগর – এই ছয়টি শহরে প্রতিযোগিতাগুলি অনুষ্ঠিত হবে। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় এবং পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর শ্রী মোদী ক্রীড়াক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানের পরিকাঠামো গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছেন। এর ফলে খুব কম সময়ের মধ্যে এ ধরনের একটি বড় প্রতিযোগিতা গুজরাটে আয়োজন করা সম্ভব হল।

 
PG/CB/DM