Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

মধ্যপ্রদেশের কারাহাল-এ মহিলা স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেন

মধ্যপ্রদেশের কারাহাল-এ মহিলা স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেন


নয়াদিল্লি,  ১৭  সেপ্টেম্বর, ২০২২

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী মধ্যপ্রদেশের শেওপুরের কারাহাল-এ আয়োজিত স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। এই উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনার অধীন চারটি তুলনামূলক দুর্বল আদিবাসী গোষ্ঠীর জন্য দক্ষতাবর্ধক কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী ব্যাঙ্ক ঋণের সম্মতিপত্র এসএইচজি সদস্যদের হাতে তুলে দেন এবং জল জীবন মিশনের অধীন সামগ্রী বিতরণ করেন। এসএইচজি-র সদস্য প্রায় ১ লক্ষেরও বেশি মহিলা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে ৪৩ লক্ষের বেশি মহিলা এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। 

সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সময় হলে আজ তাঁর জন্মদিনে তিনি তাঁর মায়ের কাছ থেকে আশীর্বাদ নেওয়ার চেষ্টা করবেন। আজকে তিনি যদিও তাঁর মায়ের কাছে যেতে পারেননি, তিনি বলেন যে তাঁর মা জেনে খুশি হবেন যে তিনি ১ লক্ষ আদিবাসী মায়ের আশীর্বাদ পাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘ভারতের কন্যা এবং মায়েরা আমার রক্ষাকবচ।’ তিনি বলেন, বিশ্বকর্মা জয়ন্তীতে সয়ম্ভর গোষ্ঠীর এই বিরাট সম্মেলন বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে। বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে তিনি সকলকে শুভেচ্ছা জানান। 

৭৫ বছর পরে ভারতে আবার চিতা বাঘ ফিরে আসায় প্রধানমন্ত্রী আনন্দ ও গর্ব প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, “এখান আসার আগে কুনো জাতীয় উদ্যানে চিতা বাঘ ছেড়ে আসার সৌভাগ্য আমার হয়েছে।” তাঁর অনুরোধে চিতাদের সম্মানে দাঁড়িয়ে হাততালি নেন। চিতাদের তিনি সম্মানীয় অতিথি বলে বর্ণনা করেন। সম্মেলনে উপস্থিত সকলকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “চিতাদেরকে আপনাদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হল। কারন আপনাদের ওপরে বিশ্বাস রয়েছে। আমি বিশ্বাস রাখি যে আপনারা যাবতীয় প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েও চিতাদের কোনো ক্ষতি হতে দেবেন না। এই কারনবশতই আজ ৮টি চিতার দায়িত্বভার আমি আপনাদের ওপরে অর্পণ করে গেলাম।” আজ স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর ১০টি চারাগাছ পোঁতার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতে পরিবেশ রক্ষার এই উদ্যোগ  নতুন করে শক্তি প্রদান করবে। 

ভারতে মহিলা প্রতিনিধিত্বের উত্তরোত্তর বৃ্দ্ধির ওপর আলোকপাত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত শতাব্দীর ভারত আর এই শতাব্দীর নতুন ভারতের মধ্যে মহিলা শক্তি পার্থক্য নিরুপণের কারণ হয়ে উঠবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “আজকে নতুন ভারতে পঞ্চায়েত ভবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি ভবন পর্যন্ত মহিলা শক্তির পতাকা উড়ছে।” তিনি উল্লেখ করেন যে, সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিভিন্ন পঞ্চায়েত শাখায় ১৭ হাজার মহিলা নির্বাচিত হয়েছেন। একে বড় পরিবর্তনের চিহ্ন বলে উল্লেখ করেন তিনি। 

স্বাধীনতা সংগ্রামে এবং জাতির সুরক্ষার ক্ষেত্রে মহিলাদের অবদানের কথা প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। সাম্প্রতিক হর ঘর তিরঙ্গা যাত্রায় স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী এবং মহিলাদের ভূমিকার সপ্রশংস উল্লেখ করেন তিনি। সেই সঙ্গে করোনার সময়কালে তাঁদের উদ্যোগেরও তিনি ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ‘স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী’ ‘জাতি সহায়তা’ গোষ্ঠীতে রূপান্তরিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে যে কোন ক্ষেত্রেরই উন্নতি মহিলা প্রতিনিধিত্বের বৃদ্ধির সঙ্গে  সরাসরি সম্পর্কিত। এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসাবে তিনি স্বচ্ছ ভারত অভিযানের সাফল্যের উল্লেখ করেন যা মহিলা নেতৃত্বাধীন উদ্যোগ। একইরকমভাবে গত তিন বছরে ভারতে ৭ কোটি পরিবার পাইপ বাহিত পরিশ্রুত জলের সংযোগ পেয়েছে। এর মধ্যে মধ্যপ্রদেশে রয়েছেন ৪০ লক্ষ পরিবার। এই সাফল্যের জন্য ভারতের মহিলাদের পূর্ণ কৃতিত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী আলোকপাত করেন যে গত ৮ বছরে স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী সশক্তিকরণের জন্য সরকার বহুবিধ উদ্যোগ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, “দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ৮ কোটিরও বেশি ভগিনী এই অভিযানের সঙ্গে জড়িত। আমাদের লক্ষ্য হল প্রত্যেকটি গ্রামীণ পরিবার থেকে অন্তত একজন ভগিনী এই অভিযানে যোগ দিন।”

এক জেলা এক পণ্য উদ্যোগের ওপরে আলোকপাত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক জেলার আঞ্চলিক পণ্যের বড় বাজার দিতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতিতে মহিলা উদ্যোগপতিদের নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে সরকার নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন যে তাদের পণ্যের জন্য যে বাজার তৈরি করা হয়েছে সেখানে স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর পণ্য বিক্রির  মূল্য ৫০০ কোটি টাকা। পিএম জনধন যোজনা এবং পিএম কৌশল যোজনার সুফল মহিলাদের কাছে পৌঁছচ্ছে। জেম পোর্টালে এসএইচজি পণ্যের  জায়গা থাকার কথা উল্লেখ করেন তিনি। 

প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে ভারত প্রভূত প্রয়াস চালিয়েছে যাতে রাষ্ট্রসংঘ ২০২৩ সালকে মোটা খাদ্যশস্যের একটি বছর হিসাবে ঘোষণা করে এবং আন্তর্জাতিকভাবে তার উদযাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে সেপ্টেম্বর মাসটিকে দেশে পুষ্টি মাস হিসাবে উদযাপন করা হয়ে থাকে। প্রধানমন্ত্রী জানান যে সফররত বিদেশী অভ্যাগতদের জন্য খাদ্য তালিকায় মোটা দানার খাদ্য শস্যের অন্তত একটা পদ যাতে রাখা থাকে সেই ব্যাপারটি তিনি নিশ্চিত করবেন। 

২০১৪ সাল থেকে সরকার যে সব উদ্যোগ নিয়ে আসছে তার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহিলাদের মর্যাদা বৃদ্ধিতে দেশ নিরলস কাজ করে চলেছে। মহিলারা তাঁদের প্রাত্যহিক জীবনে যে সমস্ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন তার সমাধানেরও চেষ্টা করা হচ্ছে। শৌচাগারের অনুপস্থিতিতে এবং রান্নাঘরে কাঠের জ্বালানীর ধোঁয়া থেকে মহিলাদের যে কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হতে হতো তার উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। দেশে ১১ কোটিরও বেশি শৌচালয় নির্মাণ, ৯ কোটিরও বেশি পরিবারকে গ্যাসের সংযোগ দেওয়া এবং ভারতের প্রত্যন্ত এলাকায় কয়েক কোটি পরিবারে পাইপলাইন বাহিত জল সংযোগ পৌঁছে দেওয়ায় তাদের জীবনযাত্রা যে অনেক সহজ হয়েছে সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন। মাত্রু বন্দনা যোজনায় সন্তান সম্ভবা মায়েদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ১১ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। মধ্যপ্রদেশে এই প্রকল্পের অধীন মায়েরা ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা পেয়েছেন। পরিবারে আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মহিলারা ক্রমে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন বলে তিনি জানান। 

জন ধন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে মহিলাদের ক্ষমতায়ণের  বিরাট মাধ্যমে হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, করোনার সময়কালে মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নিরাপদে এবং সরাসরি সরকারের পক্ষ থেক টাকা পৌঁছানো জন ধন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সাফল্য ও শক্তি বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি জানান, “আজ পিএম আবাস যোজনায় গৃহ প্রাপকদের তালিকায় মহিলাদের নাম নথিভুক্ত করা থাকে। দেশে ২ কোটিরও বেশি মহিলার নামে বাড়ি দিতে আমাদের সরকার সমর্থ হয়েছে। মুদ্রা প্রকল্পে এ পর্যন্ত ১৯ লক্ষ কোটি টাকা দেশ জুড়ে ছোট ব্যবসার ক্ষেত্রে দেওয়া হয়েছে। এই টাকার ৭০ শতাংশই পেয়েছেন মহিলা উদ্যোগপতিরা। আমি খুশি যে সরকারের এই প্রচেষ্টার কারনে আজকের পরিবারগুলিতে উত্তরোত্তর অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মহিলারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মহিলাদের অর্থনৈতিক সশক্তিকরণ সমাজের ক্ষেত্রেও তাদের অনুরূপ সশক্তি প্রদান করে।” ভারতের কন্যারা সৈনিক স্কুলে এখন নাম নথিভুক্ত করছেন বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন পুলিশ, কম্যান্ডো হওয়া থেকে শুরু করে তাঁরা এখন সেনাবাহিনীতে পর্যন্ত যোগ দিচ্ছেন। তাদের জন্য সম্ভাবনার নতুন নতুন ক্ষেত্র উন্মুক্ত করতে বন্ধ দরজাগুলিকে খুলে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী সরকারকে কৃতিত্ব দেন। গত ৮ বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে সে ব্যাপারে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রী গর্বের সঙ্গে বলেন, পুলিশ বাহিনীতে মহিলাদের সংখ্যা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ ছাপিয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৩৫ হাজারেরও বেশি আমাদের কন্যা দেশের শত্রুর মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন যে “গত ৮ বছর আগে যা ছিল তার থেকে এই সংখ্যা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনাদের শক্তিতে আমার পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে। সবকা প্রয়াসের মধ্য দিয়ে উন্নত সমাজ এবং শক্তিশালী জাতি গঠনে আমরা নিশ্চিত সফল হবো।”

মধ্যপ্রদেশের রাজ্যপাল শ্রী মাঙ্গুভাই প্যাটেল, মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী শিবরাজ সিং চৌহান, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের মধ্যে শ্রী নরেন্দ্র সিং তোমর, শ্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া,  ডঃ বীরেন্দ্র কুমার, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে শ্রী ফগ্গন সিং কুলস্তে এবং শ্রী প্রহ্লাদ প্যাটেল অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। 

প্রেক্ষাপট

দীনদয়াল অন্তদ্বয় যোজনা জাতীয় গ্রামীণ জীবিকা মিশনের অধীন মহিলা স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর হাজারো মহিলা সদস্য এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। 

এই অনুষ্ঠানে পিএম কৌশল বিকাশ যোজনার অধীন চারটি বিশেষত দুর্বল আদিবাসী গোষ্ঠীর দক্ষতা কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। এইসব আদিবাসী দরিদ্র পরিবারগুলির জীবনধারন এবং তাদের উপার্জন ও উন্নত জীবনযাত্রায় দীনদয়াল অন্ত্যদ্বয় যোজনা এবং জাতীয় গ্রামীণ জীবিকা মিশন সাহায্য করে। মহিলা এসএইচজি সদস্যদের স্বশক্তিকরণের লক্ষ্যে তাদের গার্হস্থ্য হিংসা এবং লিঙ্গগত বৈষম্য থেকে মুক্ত করে শিক্ষাদান পুষ্টিকর খাবার, স্বাস্থ্য এবং পরিচ্ছন্নতা প্রভৃতির ক্ষেত্রে কাজ করে আসছে। 

PG/AB/ NS