Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

এলবিএসএনএএ-এর ৯৬তম কমন ফাউন্ডেশন কোর্সের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

এলবিএসএনএএ-এর ৯৬তম কমন ফাউন্ডেশন কোর্সের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ


নয়াদিল্লি, ১৭ মার্চ, ২০২২

 

উপস্থিত সকল যুব বন্ধুদের কৃতিত্বের সঙ্গে ফাউন্ডেশন কোর্স সম্পূর্ণ করার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আজ হোলি উৎসব। আমি সমস্ত দেশবাসীকে, আপনাদেরকে, অ্যাকাডেমির সমস্ত প্রশিক্ষক ও কর্মচারীদেরকে, তাঁদের পরিবার এবং আপনাদের পরিবারের সবাইকে হোলি উপলক্ষে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আজ আপনাদের অ্যাকাডেমি থেকে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলজি, লাল বাহাদুর শাস্ত্রীজিকে সমর্পিত পোস্টাল সার্টিফিকেটও জারি করা হয়েছে। আজ এখান থেকে নতুন স্পোর্টর্স কমপ্লেক্স-এর উদ্বোধন এবং ‘হ্যাপি ভ্যালি কমপ্লেক্স’-এর উদ্বোধনও সম্পন্ন হয়েছে। এই সকল সেবা টিম স্পিরিটের, ‘হেলথ অ্যান্ড ফিটনেস’ বা স্বাস্থ্য ও সুস্থতার ভাবনাকে শক্তিশালী করে তুলবে। অসামরিক পরিষেবাকে আরও স্মার্ট, আরও এফিশিয়েন্ট বা দক্ষ করে তুলতে সাহায্য করবে।

বন্ধুগণ,

আমি বিগত বছরগুলিতে পাশ করে নবীন সিভিল সার্ভেন্টস হওয়া অনেক ব্যাচের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎকার হয়েছে, তাঁদের সঙ্গে আমি একটা দীর্ঘ সময়ও কাটিয়েছি। কিন্তু আজআপনাদের যে ব্যাচ, আমার দৃষ্টিতে এটি অত্যন্ত স্পেশাল। আপনারা ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষে এই অমৃত মহোৎসবের সময় নিজেদের কর্মজীবনে পা রাখতে চলেছেন। আমাদের মধ্যে অনেকেই সেই সময় থাকবে না যখন ভারত তার স্বাধীনতার শততম বর্ষে প্রবেশ করবে। কিন্তু আপনাদের এই ব্যাচের সকলেই সেই সময় থাকবেন। আপনারা প্রত্যেকেই থাকবেন। স্বাধীনতার এই অমৃতকালে আগামী ২৫ বছরে দেশ যতটা উন্নয়ন করবে, সেইসব উন্নয়ন যাত্রায় আপনাদের সাফল্যগাথা, আপনাদের অবদান, আপনাদের এই টিমের অনেক বড় ভূমিকা থাকতে চলেছে।

বন্ধুগণ,

একবিংশ শতাব্দীর যে গন্তব্যে আজ ভারত পৌঁছেছে, গোটা বিশ্বের নজর আজ ভারতের ওপর দৃঢ় নিবদ্ধ। বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনা যে ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে তারপর একটি নতুন ‘ওয়ার্ল্ড অর্ডার’বা বিশ্ব-ব্যবস্থা গড়ে উঠছে, এই নতুন ‘ওয়ার্ল্ড অর্ডার’-এ ভারতকে তার ভূমিকা বাড়াতে হবে এবং দ্রুতগতিতে নিজের উন্নয়নও করতে হবে। বিগত ৭৫ বছরে আমরা যে গতিতে উন্নয়ন করেছি, এখন তার থেকে অনেক গুণ দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার সময়। আগামী বছরগুলিতে আপনারা কোথাও কোনও জেলার দায়িত্ব সামলাবেন, আবার কেউ কোনও বিভাগের দায়িত্ব সামলাবেন, কেউবা পরিকাঠামোর অনেক বড় প্রকল্পের তদারকি করবেন, আবার কেউ নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিজেদের অভিজ্ঞতালব্ধ মূল্যবান পরামর্শ দেবেন। এই সকল কাজে আপনাদের একটি বিষয়ে সর্বদাই খেয়াল রাখতে হবে আর সেটি হল একবিংশ শতাব্দীর ভারতের সবচাইতে বড় লক্ষ্য। এই লক্ষ্য হল আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলার, আধুনিক ভারত গড়ে তোলার। আমাদের এই সময় নষ্ট করতে দিলে চলবে না। সেজন্য আজ আমি আপনাদের মধ্যে অনেক অনেক প্রত্যাশা নিয়ে এসেছি। এই প্রত্যাশাগুলি আপনাদের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যুক্ত আর আপনাদের কৃতিত্বের সঙ্গেও যুক্ত। আপনাদের কাজ করার পদ্ধতির সঙ্গে যুক্ত, আপনাদের কর্মসংস্কৃতির সঙ্গেও যুক্ত। সেজন্য আমি আজ ঠিক করেছি কিছু ছোট ছোট বিষয় নিয়ে কথা বলবো, যা হয়তো আপনাদের ব্যক্তিত্ব গঠনের ক্ষেত্রে কিছু কাজে লাগতে পারে!

বন্ধুগণ,

প্রশিক্ষণের সময় আপনাদেরকে সর্দার প্যাটেলজির দূরদৃষ্টি, তাঁর চিন্তাভাবনা সম্পর্কে অবগত করানো হয়েছে। সেবাভাব এবং কর্তব্যভাব – এই দুইয়ের গুরুত্ব ও মহত্ব আপনাদের প্রশিক্ষণের অভিন্ন অঙ্গ ছিল। আপনারা যত বছর এই সেবায় থাকবেন, আপনাদের ব্যক্তিগত এবং পেশাগত সাফল্যের মূলধন এই ফ্যাক্টরগুলি থেকেই সংগ্রহ করতে হবে। কখনও কি আমার সেবাভাবে কোনও ত্রুটি থেকে গেছে? কর্তব্যভাবের ত্রুটি থেকে গেছে? – এই ধরনের বিষয়, এই ধরনের প্রশ্ন প্রত্যেকবার প্রতিটি কাজের পর নিজেকে, আপনাদের নিজেকে জিজ্ঞাসা করতে হবে। নিজের কাজের পর্যালোচনা করতে হবে, মূল্যায়ন করতে হবে, আর কখনও যদি আমরা এই লক্ষ্যকে ধোঁয়াশা হয়ে উঠতে দেখি, কিংবা লক্ষ্যকে দেখতে না পাই, তাহলে আবার এই লক্ষ্যকে সামনে পুনঃস্থাপিত করে নতুন করে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। এক্ষেত্রে কোনও ডাইভারশন এলে চলবে না, এক্ষেত্রে কোনও ডাইলিউশন এলে চলবে না। এটা আমরা সবাই দেখেছি যে যখনই যাঁর মধ্যে সেবাভাবে ত্রুটি থেকেছে, যখনই যাঁর মস্তিষ্কে ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের ভাব বেশি জেগে উঠেছে, তিনি ব্যক্তি হোন কিংবা ব্যবস্থা, তার অনেক লোকসান হয়েছে। কারোর যদি তাড়াহুড়ো থাকে, কারোর যদি শ্লথতা থাকে, ঢিলেমি থাকে, উভয় ক্ষেত্রেই লোকসান হওয়া সুনিশ্চিত।

বন্ধুগণ,

আপনাদের আরও একটি বিষয় আমি খুব ভালোভাবে বুঝতে পারি। এজন্য বলছি যে এটা আপনাদের খুব কাজে লাগতে পারে। যখন আমরা ‘সেন্স অফ ডিউটি’ বা কর্তব্যভাব এবং ‘সেন্স অফ পারপাস’ বা উদ্দেশ্যভাব নিয়ে কাজ করি, তখন কখনও সেই কাজ আমাদের বোঝা বলে মনে হয় না। আপনারাও এখানে একটি উদ্দেশ্যভাব নিয়ে এসেছেন। আপনারা সমাজের জন্য, দেশের জন্য একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের অঙ্গ হয়ে উঠতে এসেছেন। আদেশ দিয়ে কাজ করানো এবং অন্যদের কর্তব্যবোধে প্রেরণা যুগিয়ে কাজ করানো – এই দুইয়ের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য থাকে, অনেক বড় পার্থক্য থাকে। এটা একটা লিডারশিপ কোয়ালিটি বা নেতৃত্বসুলভ গুণ। আমি মনে করি যে এটা আপনাদের নিজেদের মধ্যে বিকশিত করতে হবে। টিম স্পিরিটের জন্য এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এক্ষেত্রে কোনও কম্প্রোমাইজ বা সমঝোতা সম্ভব নয়। এটা করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

বন্ধুগণ,

আজ থেকে কয়েক মাস পরেই আপনারা ফিল্ডে কাজ করতে যাবেন। আপনাদের ভবিষ্যতের জীবনকে এখন থেকে ফাইল এবং ফিল্ডের পার্থক্য বুঝেই কাজ করতে হবে। শুধু ফাইলের মধ্যে আপনারা ফিল্ডের প্রকৃত অনুভব পাবেন না। অনুভবের জন্য আপনাদের ফিল্ডে গিয়ে তৃণমূল স্তরে কাজ করতে হবে, আর আমার এ কথাটি আপনারা সারা জীবন মনে রাখবেন। যে ফাইলে যত পরিসংখ্যান থাকে, সেগুলি নিছকই সংখ্যা নয়, প্রত্যেক পরিসংখ্যান, প্রতিটি নম্বরে প্রাণ থাকে, প্রতিটি সংখ্যায় জীবন জুড়ে থাকে। সেই জীবনে কিছু স্বপ্ন থাকে। সেই জীবনে কিছু আকাঙ্ক্ষা থাকে, সেই জীবনের সামনে কিছু সমস্যা থাকে, প্রতিকূলতা থাকে। আর সেজন্য আপনাদের সংখ্যার জন্য নয়, প্রত্যেক জীবনের জন্য কাজ করতে হবে। আমি আপনাদের সামনে আমার মনের আরও একটি ভাবনা তুলে ধরতে চাই। এই ভাবনাকে আপনারা মন্ত্র হিসেবেও নিতে পারেন। এই মন্ত্র আপনাদের প্রতিটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সাহস জোগাবে আর এগুলিকে মেনে চললে ভবিষ্যৎ জীবনে আপনাদের ভুল হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পাবে।

বন্ধুগণ,

আপনারা যেখানেই যাবেন, আপনাদের মনে একটা উৎসাহ থাকবে, উদ্দীপনা থাকবে, নতুন কিছু করে দেখানোর উৎসাহ থাকবে, অনেক কিছু থাকবে। আমি এটা করে দেব, ওটা করে দেব, এটা বদলে দেব, অমুককে উঠিয়ে উলটে দেব – এরকম অনেক কিছুই মনের মধ্যে খেলা করবে। কিন্তু আমি আপনাদের অনুরোধ করব যে, এই ধরনের ভাবনা যখনই মনে জাগবে যে এটা ঠিক নয়, এটা বদলাতে হবে, তখন আপনাদের অনেক বছর আগের এ ধরনের অনেক ব্যবস্থা নজরে আসবে। অনেক নিয়মকানুন পাবেন যা আপনাদের ‘ইরেলেভেন্ট’ বা অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হবে, পছন্দ হবে না। আপনাদের মনে হবে, এগুলি সব বোঝা। আর এরকম মনে হওয়া যে সব ক্ষেত্রে ভুল, এটা আমি কখনই বলব না। অবশ্যই মনে হবে। আপনাদের হাতে ক্ষমতা থাকবে। তখন মনে হবে, না, এটা নয়, ওটা করব। এই পদ্ধতিতে নয়, ওই পদ্ধতিতে করব। অমুক নয়, তমুক করব। এসব হতে থাকবে। কিন্তু সামান্য ধৈর্য্য নিয়ে, কিছু ভাবনাচিন্তা করে যে পথ দেখতে পারেন, সেই পথে যদি চলেন, তাহলেই আপনারা শ্রেষ্ঠ ফল পাবেন।

আমি একটা পরামর্শ দিতে চাই। যে ব্যবস্থাকে আপনার বদলে দিতে ইচ্ছা করছে, সে ব্যবস্থা কেন তৈরি হয়েছে? বা যে নিয়মে আপনার আপত্তি, সেই নিয়মই বা কেন চালু হয়েছে? কোন পরিস্থিতিতে চালু হয়েছে? তখন পরিস্থিতি কী ছিল? ফাইলের এক একটি শব্দকে, পরিস্থিতিকে আপনারা ‘ভিস্যুয়ালাইজ’ করুন। বোঝার চেষ্টা করুন যে ২০ বছর, ৫০ বছর কিংবা ১০০ বছর আগে এটি কেন চালু হয়েছিল, তার ‘রুট কজ’ বা তৈরি হওয়ার গোড়ার কারণকে অবশ্যই বোঝার চেষ্টা করুন। তারপর ভাবুন। সেটাকে অন্যভাবে স্টাডি করুন। যে ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে তার পেছনে যে যুক্তি রয়েছে, যে ভাবনা রয়েছে, যে প্রয়োজনীয়তা রয়েছে – এই সবকিছুর গভীরে গিয়ে ভাবুন যে যখন নিয়মটি তৈরি হয়েছিল, তখন এর পেছনে কারণ কী ছিল। যখন আপনারা এটি নিয়ে গবেষণা করবেন, অধ্যয়ন করবেন, কোনও সমস্যার গোড়ায় যাবেন, তখনই আপনারা তার ‘পার্মানেন্ট সলিউশন’ বা স্থায়ী সমাধান দিতে পারবেন। তাড়াহুড়ো করে যদি কোনও সিদ্ধান্ত নেন, তখন সেটা তৎকালীন ভালো লাগবে,  কিন্তু স্থায়ী সমাধান করতে পারবেন না। এই সমস্ত বিষয়গুলির গভীরে গেলেই আপনারা সেই এলাকার ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ বা প্রশাসনের লাগাম নিজের হাতে নিতে পারবেন। তবেই যে কোনও গৃহীত সিদ্ধান্তে  সাফল্যের মুখ দেখতে পাবেন। এত কিছু করার পর যখন আপনারা সিদ্ধান্ত নেবেন, তখন আরও একটি কথা অবশ্যই মনে রাখবেন …

মহাত্মা গান্ধী প্রায়ই বলতেন যে যদি আপনার সিদ্ধান্ত সমাজের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিকে উপকৃত করে, তাহলে আপনারা ওই সিদ্ধান্ত নিতে কোনও সঙ্কোচ করবেন না। আমি এই বক্তব্যের সঙ্গে আরও একটি কথা জুড়তে চাই যে, আপনারা যে সিদ্ধান্তই নেবেন, যে ব্যবস্থারই পরিবর্তন করবেন, তা অবশ্যই গোটা ভারতের প্রেক্ষিতে ভাবনাচিন্তা করে করবেন, কারণ আপনারা অল ইন্ডিয়া সিভিল সার্ভিসেস-এর প্রতিনিধিত্ব করছেন। আপনাদের মাথায় সিদ্ধান্ত ‘লোকাল’ হলেও স্বপ্নগুলি হবে গোটা দেশের জন্য।

বন্ধুগণ,

স্বাধীনতার এই অমৃতকালে আমাদের ‘রিফর্ম, পারফর্ম, ট্রান্সফর্ম’কে ‘নেক্সট লেভেল’ বা পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। সেজন্যই আজকের ভারত ‘সবকা প্রয়াস’-এর ভাবনা নিয়ে এগিয়ে চলেছে। আপনাদেরও নিজেদের প্রচেষ্টার মধ্যে এটা ভাবতে হবে যে ‘সবকা প্রয়াস’, সকলের অংশীদারিত্বের শক্তি কেমন হয়। আপনাদের কাজের মাধ্যমে আপনারা যত বেশি ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করবেন, সবাইকে যুক্ত করার চেষ্টা করবেন, প্রত্যেক ব্যক্তিকে জুড়ে কাজ করার চেষ্টা করবেন, ততই সেটা একটা পরিধি নির্মাণ করবে। প্রথম সার্কেল বা বৃত্ত তৈরি করবে। কিন্তু বড় বৃত্তে আপনারা সামাজিক সংগঠনগুলিকে জুড়বেন। তারপর সাধারণ মানুষকে জুড়বেন। এক প্রকার ‘সবকা প্রয়াস’ বা সকলের প্রচেষ্টা সমাজের প্রান্তিকতম ব্যক্তিটিকে আপনাদের প্রচেষ্টার অংশ করে তুলতে হবে, আপনাদের কাজে তাঁদের ‘ওনারশিপ’ থাকতে হবে। যদি আপনারা এভাবে কাজ করেন তাহলে কল্পনাও করতে পারবেন না যে আপনাদের শক্তি কতগুণ বৃদ্ধি পাবে।

এখন যেমন ভাবুন, কোনও বড় শহরে বা আমাদের প্রত্যেক নগরেি অনেক নগর নিয়ম রয়েছে। সেখানে যত সাফাই কর্মচারী রয়েছেন, তাঁরা সর্বদাই সক্রিয় থাকেন, শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য তাঁরা প্রাণপাত পরিশ্রম করেন। কিন্তু তাঁদের প্রচেষ্টার সঙ্গে যদি শহরের প্রত্যেক পরিবার যুক্ত হয়, প্রত্যেক নাগরিক যুক্ত হন, নোংরা হতে দেব না, নোংরা থাকতে দেব না – এই সঙ্কল্প যদি গণ-আন্দোলনে পরিণত হয়, তাহলে দেখবেন সেই সাফাই কর্মচারীদেরও প্রতিটি দিন একটি উৎসবের দিনে পরিণত হবে। প্রবল উৎসাহে তাঁরা কাজ করবে। আমি ঠিক বললাম কিনা! ফলে যে পরিণাম পাওয়া যাবে তা অনেকগুণ বৃদ্ধি পাবে, বাড়বে। বাড়বে কিনা?  কারণ ‘সবকা প্রয়াস’মন্ত্র অনুসরণ করে সকলের প্রচেষ্টায় একটি ইতিবাচক পরিণাম আসতে বাধ্য। যখন কোনও অভিযানে গণ-অংশীদারিত্ব তৈরি হয়, তখন একের সঙ্গে এক যোগ করলে দুই হয় না, তখন একের সঙ্গে এক মিলে এগারো হয়ে যায়।

বন্ধুগণ,

আজ আমি আপনাদেরকে আরও একটি টাস্ক বা দ্বায়িত্ব দিতে চাই। এই দ্বায়িত্ব আপনাদের নিজেদের গোটা কেরিয়ার ধরে করে যেতে হবে। এক প্রকার এই দ্বায়িত্বকে আপনাদের জীবনের একটি অঙ্গ করে তুলতে হবে, অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। এই দ্বায়িত্বকে আপনাদের এক প্রকার শিষ্টাচারের পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। আমার মতে শিষ্টাচারের সরাসরি পরিভাষা এটাই যা যত্ন নিয়ে তৈরি করা একটি ভালো অভ্যাস, যে অভ্যাস আমাদের জীবনের উন্নতির পথে কাজে লাগে, সেটাই হল শিষ্টাচার।

আপনারা যেখানেই কাজ করবেন, যে জেলাতেই কাজ করবেন, মন থেকে ঠিক করে নিন যে সেই জেলায় অনেক সমস্যা থাকবে। এত সমস্যা থাকবে যে আপনি সেগুলির সমাধান করে যেখানে পৌঁছতে চান, সে কাজ করার সময়ও আপনার কাজের নানারকম ব্যাখ্যা হবে, পর্যালোচনা হবে। আপনার মনে এ কথাও জাগবে যে আগে যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন তাঁরা না জানি এসব কেন করেননি? এটা কেন করেননি, ওটা কেন করেননি? কেন করেননি? এসব আপনার মাথায় আসবে। কিন্তু আপনি যখন কাজ করতে যাবেন, আপনাকে সেই এলাকার অর্থাৎ, আপনার কর্মক্ষেত্র যেটাই হোক না কেন, ছোট কিংবা বড়, আপনাকে পাঁচটি বড় সমস্যা বেছে নিতে হবে। ভাবতে হবে যে, আমি এই পাঁচটি সমস্যার সমাধান করবই, এবং পাঁচটি সমস্যাকে আপনাকে চিহ্নিত করতে হবে। সেই সমস্যাগুলি এমন হবে যেগুলি ওই এলাকার মানুষের জীবনকে কঠিন করে তুলেছে, তাঁদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করেছে।

লোকাল লেভেলে বা স্থানীয় স্তরে আপনাদের এই সমস্যা আইডেন্টিফিকেশন বা শনাক্ত করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এটা কেন প্রয়োজন, তা আমি আপনাদেরকে বলছি। যেমন, আমরা যখন সরকারের দায়িত্ব নিই, তখন আমরা এরকম বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ বা প্রতিকূলতাকে শনাক্ত করেছিলাম। একবার যদি এই প্রতিকূলতাগুলি শনাক্ত হয়ে যায়, তাহলে আমরা পরিকল্পনা মাফিক সেগুলির সলিউশন বা সমাধানের দিকে এগিয়ে যেতে পারি। এখন যেমন স্বাধীনতার পর এত বছর পেরিয়ে গেছে, দেশের গরীব মানুষের প্রত্যেকের পাকা বাড়ি থাকা উচিৎ। কিন্তু নেই। এটা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা সেই চ্যালেঞ্জটিকে সমাধানের চেষ্টা করেছি। আমরা প্রত্যেক গরীব মানুষের মাথার ওপর পাকা ছাদ সুনিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং ‘পিএম আবাস যোজনা’র মাধ্যমে দ্রুতগতিতে এই গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণ করে দেওয়ার কাজ শুরু করে দিয়েছি।

দেশের এমন অনেক জেলা ছিল যেখানে অনেক বড় বড় সমস্যা ছিল, যেগুলি উন্নয়নের ক্ষেত্রে কয়েক দশক পিছিয়ে ছিল। হয়তো সে রাজ্যের অন্যান্য জেলা অনেক এগিয়ে, কিন্তু দুটি জেলা খুব পিছিয়ে বা একটি জেলা অনেক এগিয়ে, কিন্তু দুটি ব্লক খুব পিছিয়ে। আমরা একটি দেশ রূপে জাতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে একটি মাপকাঠি তৈরি করি যে এই ধরনের জেলাগুলিকে চিহ্নিত করা হোক, আর ‘অ্যাসপিরেশনাল ডিস্ট্রিক্টস’ বা উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলা হিসেবে চিহ্নিত করে অভিযান চালানো হোক, যাতে সেগুলিকে তাদের রাজ্যের গড় উন্নয়নের সমকক্ষ করে তোলা যায়। যদি সম্ভব হয় তাহলে ‘ন্যাশনাল অ্যাভারেজ’ বা গোটা দেশের গড় উন্নয়নের সমকক্ষ করে তুলতে হবে।

এ ধরনের একটি চ্যালেঞ্জ ছিল গরীবদের বাড়িতে বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ। আরও একটি ছিল গরীবদের বাড়িতে বাড়িতে রান্নার গ্যাসের সংযোগ। আমরা প্রথম সমস্যার সমাধানের জন্য ‘সৌভাগ্য যোজনা’ শুরু করি, আর দ্বিতীয়টি সমাধান করতে ‘উজ্জ্বলা যোজনা’ চালু করে প্রত্যেক গরীব মহিলাকে বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস সংযোগ দিই। স্বাধীনতার পর ভারতে প্রথমবার এমনটি করা হচ্ছে, যখন কোনও সরকার প্রকল্প রচনা করে সেটিকে স্যাচুরেশনের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য, যেভাবে বলেছে, সেভাবে করার জন্য সুপরিকল্পিত প্রকল্প রচনা করেছে।

এখন এই প্রেক্ষিতে আমি আপনাদের আরও একটি উদাহরণ দিতে চাই। আমাদের দেশে সরকারের ভিন্ন ভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে অনেক প্রকল্প বছরের পর বছর থেমে থাকত, ঝুলে থাকত। এটা আমরা দেখেছি। আজ একটি সড়ক তৈরি হল, কাল টেলিফোনওয়ালারা এসে সেটিকে খুঁড়ে দিল, তারপর আবার রাস্তা তৈরি হল। পরশু পয়ঃপ্রণালী নির্মাণকারীরা আবার খুঁড়ে দিল, তারপর আবার তৈরি হল। কেন্দ্র, রাজ্য ও স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে যথাযথ সমন্বয়ের অভাবে সৃষ্ট এই সমস্যার মোকাবিলার জন্য আমরা ‘পিএম গতি শক্তি ন্যাশনাল মাস্টার প্ল্যান’ তৈরি করি। সমস্ত কেন্দ্রীয় সরকারি বিভাগকে, সমস্ত রাজ্যকে, সংশ্লিষ্ট সকল স্থানীয় প্রশাসনকে ও সংশ্লিষ্ট সকল ভুক্তভোগীদের কোনও কাজ করার পরিকল্পনা আগে জানিয়ে দেওয়া, এবং সমন্বয়ের মাধ্যমে দুটি বা তিনটি কাজ একসঙ্গে করা সুনিশ্চিত করা হচ্ছে। অর্থাৎ, যখন আপনারা সমস্যাগুলিকে চিহ্নিত করে নেন, তখন সমাধান খুঁজে তার জন্য কাজ করা সহজ হয়ে যায়।

আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ যে আপনারাও দায়িত্ব নিয়ে যে এলাকায় কাজ করতে যাবেন, সেখানকার পাঁচটি বা সাতটি কিংবা দশটি, যা আপনাদের ঠিক মনে হয়, সেই সমস্যাগুলিকে চিহ্নিত করুন যে সমস্যাগুলি আপনার কর্মক্ষেত্রের জনগণের উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যদি আপনারা এই সমস্যাগুলির সমাধান করতে পারেন, তাহলে দেখবেন ওই এলাকার মানুষের মনে আনন্দের ঢেউ বয়ে যাবে, তাঁরা মুক্তির আনন্দ পাবেন, সরকারের প্রতি তাঁদের বিশ্বাস বেড়ে যাবে, আপনাদের প্রতি তাঁদের সমাদর বেড়ে যাবে। সেজন্যই বলছি, মনে মনে ঠিক করুন, আমার কার্যকালে আমি এই এলাকাকে অমুক অমুক সমস্যাগুলি থেকে মুক্ত করে ছাড়ব।

আপনারা হয়তো শুনেছেন, আমাদের শাস্ত্রেও ‘স্বাঁত সুখায়’-এর কথা বলা হয়েছে। কখনও কখনও জীবনে অনেক কাজ করার পর যত আনন্দ পাওয়া যায়, তা জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এরকম নিজে ঠিক করে সমস্যার সমাধান করতে পারলে সেই জয় আপনার মনের ‘স্বতঃ’ সুখী হয়ে উঠবে, আনন্দ পাবে, উদ্দীপনায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে, কখনও ক্লান্তি অনুভব করবেন না। এমনই আনন্দের হয় এই ‘স্বাঁত সুখায়’। কিন্তু যদি একটি চ্যালেঞ্জ, দুটি চ্যালেঞ্জ, তিনটি চ্যালেঞ্জ নিয়ে সেগুলিকে আপনি সম্পূর্ণ রূপে নির্মূল করে দিতে পারেন, আপনার সম্পূর্ণ ‘রিসোর্সেস’ বা সম্পদ ব্যবহার করে অথবা আপনার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে, আপনার মেধাকে কাজে লাগিয়ে সাফল্য পান, তবেই এমন ‘স্বাঁত সুখায়’ অনুভূতির মালিক আপনি হতে পারেন। আপনারা দেখবেন, জীবন আনন্দ ও সন্তোষ নিয়ে যতটা ছন্দোবদ্ধভাবে এগিয়ে যায়, আর কোনওভাবে তা হয় না। কোনও প্রতিকূলতাকে সমাধান করার মাধ্যমে যে সন্তোষ আপনি পাবেন, জনগণের সমস্যা তা সে যতই তীব্র হোক না কেন, তাকে সমাধানের মাধ্যমে যে আনন্দ পাবেন, সেই আনন্দ আপনাকে কয়েক গুণ সামর্থ্যবান হয়ে ওঠার অনুভূতি এনে দেবে।

আপনার কাজও এমনই হওয়া উচিৎ যা মনে আনন্দ এনে দেবে, শান্তি এনে দেবে আর এটা তখনই হবে যেখন সেই কাজের সুবিধাভোগীরা দেখা হলে বলতে শুরু করবে, সাহেব, আপনি ছিলেন সেজন্য আমার কাজ খুব ভালোভাবে হয়ে গেছে। খুব ভালো কাজ করে দিয়েছেন সাহেব!

আমি চাই, আপনারাও এমন বিষয়গুলি খুঁজে বের করুন যেগুলিতে আপনারা ‘কোয়ালিটেটিভ চেঞ্জ’ বা উৎকর্ষসম্পন্ন পরিবর্তন আনতে পারবেন। সেজন্য যদি আপনাদের ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ বা এ বিষয়ে হওয়া আন্তর্জাতিক কোনও গবেষণাপত্র পাঠ করতে হয়, তাহলে তাও পাঠ করবেন। আইন নিয়ে যদি পড়াশোনা করতে হয়, তাহলে সেটা করবেন। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যদি সাহায্য নিতে হয়, তাহলে তা নেবেন। আপনারা কখনই পিছিয়ে থাকবেন না। আপনারা ভাবুন! আপনাদের মতো কয়েকশ’ মানুষের শক্তি দেশের ভিন্ন ভিন্ন জেলায় যখন একসঙ্গে প্রয়োগ করা হবে; আপনারা ৩০০-৪০০ জন রয়েছেন। অর্থাৎ, দেশের মোট যত জেলা, তার অর্ধেক জেলাগুলিতে কোথাও না কোথাও আপনাদের পা পড়বে। অর্থাৎ, আপনারা সবাই মিলেমিশে অর্ধেক ভারতে একটি নতুন আশার জন্ম দেবেন, আর আপনারা যদি এই আশার জন্ম দিতে পারেন, তাহলে দেশে কত বড় পরিবর্তন আসবে – তা কল্পনাও করতে পারবেন না! আপনারা কেউ একা নন, ৪০০টি জেলায় আপনাদের এই ভাবনা, আপনাদের এই প্রচেষ্টা, আপনাদের এই পদক্ষেপ, আপনাদের এই উদ্যোগ, অর্ধেক ভারতকে প্রভাবিত করতে পারে।

বন্ধুগণ,

অসামরিক পরিষেবার ‘ট্রান্সফরমেশন’ বা রূপান্তরণের এই পর্যায়ে আমাদের সরকার ‘রিফর্মস’ বা সংস্কারকে সমর্থন করছে। ‘মিশন কর্মযোগী’ এবং ‘আরম্ভ’ প্রোগ্রাম – এ ধরনের সংস্কার কর্মসূচিরই একটি অঙ্গ। আমাকে বলা হয়েছে যে, আপনাদের অ্যাকাডেমিতেও প্রশিক্ষণের স্বরূপ এখন ‘মিশন কর্মযোগী’-ভিত্তিক করে দেওয়া হয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনারা প্রত্যেকে ইতিমধ্যেই এর মাধ্যমে অনেক উপকৃত হয়েছেন। আরও একটি বিষয় আমি আপনাদের নজরে আনতে চাইছি। আপনারা অবশ্যই প্রার্থনা করুন, যেন ভবিষ্যতে আপনাদের সামনে কোনও সহজ কাজ না আসে। একথা শুনে আপনাদের অনেকের চেহারায় পরিবর্তন এসে গেছে দেখছি! আমি দেখতে পাচ্ছি অনেকে আমার একথা শুনে ঘাবড়ে গেছেন।

আমি আবার বলছি, আপনারা এই প্রার্থনা করুন, যেন আপনাদের কোনও সহজ কাজ না করতে হয়! আপনারা হয়তো ভাবছেন যে, এ কেমন প্রধানমন্ত্রী যিনি আমাদের এমন পরামর্শ দিচ্ছেন যে আপনারা রোজ খুঁজে খুঁজে ‘চ্যালেঞ্জিং জব’ বের করবেন, আর প্রতিকূলতার সমাধানের চেষ্টা করবেন। আপনারা চেষ্টা করবেন যাতে আপনারা চ্যালেঞ্জিং জব পান। আমি একথাগুলি বলছি যে চ্যালেঞ্জিং জবের আনন্দই অন্যরকম হয়। আপনারা যত কমফর্ট জোনে যাওয়ার কথা ভাববেন, ততই আপনারা দেশের উন্নয়নের প্রতিবন্ধক হয়ে উঠবেন। নিজের উন্নয়নেরও প্রতিবন্ধক হয়ে উঠবেন। আপনার জীবনে স্থবিরতা এসে যাবে। কয়েক বছর পর আপনাদের জীবন নিজের জন্যই বোঝা হয়ে উঠবে। এখন আপনারা বয়সের সেই পর্যায়ে রয়েছেন যখন আয়ু আপনাদের সঙ্গে রয়েছে। এই বয়সেই মানুষের জীবনে সর্বাধিক ‘রিস্ক টেকিং ক্যাপাসিটি’ বা ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা থাকে। যদি আপনারা চ্যালেঞ্জিং জবের সঙ্গে যুক্ত হন, তাহলে আপনারা বিগত ২০ বছরে যা কিছু শিখেছেন, তার থেকে বেশি আগামী ২-৪ বছরে শিখবেন। এই যে শিক্ষা আপনারা পাবেন তা আপনাদের জীবনে পরবর্তী ২০-২৫ বছর অনেক কাজে লাগবে।

বন্ধুগণ,

আপনারা যে রাজ্যে কাজ করতে যাবেন, সেই রাজ্যের মানুষ না হলে ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক পরিবেশ থেকে উঠে আসার ফলে আপনাদের কাছে অনেক কিছুই অসামঞ্জস বলে মনে হবে। কিন্তু আপনাদের মধ্যে ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর উদ্দেশ্য সফল করার প্রশিক্ষণ রয়েছে। আমার বিশ্বাস, আপনাদের সেবাভাব, আপনাদের বিনম্রতা, আপনাদের সততা আগামী বছরগুলিতে আপনাদের একটি স্বতন্ত্র পরিচয় তৈরি করবে। আর বন্ধুগণ, আপনারা যদি নিজের ক্ষেত্রে পোস্টিং পান, তাহলেও… আমি আগের ব্যাচগুলিকেও এই পরামর্শ দিয়েছি,… হয়তো আপনারা অ্যাকাডেমিতে জয়েন করার পরেই আপনাদেরকে একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ লেখার কথা বলা হয়েছিল যে এই ফিল্ডে আসার পেছনে আপনাদের ভাবনা কী ছিল, স্বপ্ন কী ছিল, সঙ্কল্প কী ছিল। আপনারা এই কাজে কেন এসেছেন? আপনারা কী করতে চান? নিজের জীবনকে এই অসামরিক সেবার মাধ্যমে আপনারা কোথায় পৌঁছে দিতে চান? আপনার নিজের কর্মক্ষেত্রকে আপনারা কোথায় পৌঁছে দিতে চান? আপনারা অ্যাকাডেমিতে এসেইএই সমস্ত বিষয়ে একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ লিখেছিলেন। সেগুলিকে ক্লাউডে রেখে দিয়েছিলেন, আর যখন আপনারা চাকরিতে ২৫ বছর পূর্ণ করবেন বা আপনার বয়স যখন ৫০ বছর হবে, তখন সেটা পড়ে দেখবেন। আপনাদের অসামরিক পরিষেবায় প্রত্যেকের বয়স ৫০ বছর পূর্ণ হলে সম্ভবত একটি কর্মসূচির আয়োজন হয়। তখন পড়ে দেখবেন।

প্রত্যেক বছর যাঁরা ৫০ বছর আগে মুসৌরি অ্যাকাডেমি ছেড়ে গিয়েছিলেন বা যাঁদের ৫০ বছর বয়স হয়েছে, তাঁরা অ্যাকাডেমিতে ফিরে আসেন। আপনারাও ২৫ বছর পর, ২৫ বছর আগে যে প্রবন্ধটি লিখেছিলেন, সেটি পড়বেন। যে স্বপ্নগুলি নিয়ে অ্যাকাডেমিতে এসেছিলেন, যে লক্ষ্য স্থির করে এসেছিলেন, ২৫ বছর পর সেই প্রবন্ধ পড়ে হিসেব করুন যে সত্যি সত্যি যে কাজের জন্য এখানে এসেছিলেন, আজও কি সেই লক্ষ্যে আপনি অটল রয়েছেন, নাকি বিভ্রান্ত হয়েছেন! এমনও হতে পারে, আপনারা আজকের ভাবনা ২০-২৫ বছর পর আপনারই গুরু হয়ে উঠবে। আর সেজন্য এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আপনারা কেউ কেউ যদি না লিখে থাকেন, তাঁরা এখন এটি লিখে ক্যাম্পাসে রেখে যান, ক্লাউডে রেখে যান।

এই ক্যাম্পাসের প্রশাসন, ডায়রেক্টরদের প্রতি আমার একটি অনুরোধ, আপনাদের প্রশিক্ষণের অনেক দিক রয়েছে। আপনাদের এখানে সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার রয়েছে। সবকিছু রয়েছে। কিন্তু আরও দুটি জিনিস আপনাদের প্রশিক্ষণে যুক্ত করতে হবে। একটি হল, ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটি উন্নতমানের গবেষণাগার যেখানে আপনাদের সমস্ত আধিকারিকরা প্রশিক্ষণ নেবেন আর হবু প্রশাসকরাও এই প্রশিক্ষণের অঙ্গ হয়ে উঠবেন। এভাবেই একটি ‘ডেটা গভর্ন্যান্স’ একটি থিম রূপে আমাদের সমস্ত ট্রেনিদের প্রশিক্ষণের অঙ্গ হয়ে ওঠা উচিৎ। হ্যাঁ! ‘ডেটা গভর্ন্যান্স’। আগামীদিনে ডেটা একটি অনেক বড় শক্তি হয়ে উঠতে চলেছে। ‘ডেটা গভর্ন্যান্স’-এর প্রতিটি পর্যায়কে শিখতে হবে, বুঝতে হবে এবং যেখানে যেখানে সম্ভব প্রয়োগ করতে হবে। এই দুটি জিনিস যদি আপনারা অ্যাকাডেমিতে যুক্ত করেন, তাহলে খুব ভালো হয়। হ্যাঁ, এবার যাঁরা পাস-আউট হয়ে চলে যাচ্ছেন, তাঁদের এই প্রশিক্ষণের সৌভাগ্য হবে না। কিন্তু আগামীদিনে যাঁরা এখানে প্রশিক্ষণ নেবেন, তাঁদের সেই সৌভাগ্য হবে।

দ্বিতীয়ত, সম্ভব হলে আপনাদের এখানে যে ‘কর্মযোগী মিশন’ চালু রয়েছে, তাতে ডেটা গভর্ন্যান্সের একটি সার্টিফিকেট কোর্স চালু করুন। ট্রেনিদের অনলাইন পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখুন। সার্টিফিকেটের ব্যবস্থা রাখুন। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সেরও একটি সার্টিফিকেট কোর্স চালু করুন। সেখানেও অনলাইন পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখুন। ট্রেনিরা ছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যুরোক্র্যাটরা এই অনলাইন পরীক্ষা দিতে পারবেন, সার্টিফিকেট পাবেন। এভাবে ধীরে ধীরে একটি সংস্কৃতি গড়ে তুলুন। আধুনিক ভারতের যে স্বপ্ন আমরা দেখছি তা পূরণ করার ক্ষেত্রে, বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে এই অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ খুব কাজে লাগবে।

বন্ধুগণ,

আমার খুব ভালো লাগত যদি আমি স্বয়ং আপনাদের মাঝে গিয়ে আপনাদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারতাম। কিছুটা সময় আপনাদের সঙ্গে কাটাতে পারতাম, কিছুক্ষণ কথা বলতে পারতাম, তাহলে আমি খুব আনন্দ পেতাম। কিন্তু সময়ের অভাব। সংসদ অধিবেশনও চলছে। সেজন্য কিছু সমস্যার কারণে আমি আসতে পারিনি। কিন্তু তবুও প্রযুক্তির সাহায্যে আপনাদের সকলের দর্শনের সৌভাগ্য আমার হল। আপনাদের চেহারা, হাবভাব আমি দেখতে পাচ্ছি, আর আমার মনে যে ভাবনা রয়েছে তাও আপনাদের সামনে তুলে ধরতে পারছি।

আপনাদের সবাইকে আমার অনেক অনেক শুভকামনা, অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

ধন্যবাদ!

 

CG/SB/DM/