Search

পিএমইন্ডিয়াপিএমইন্ডিয়া

সাম্প্রতিক সংবাদ

বিষয়টিকে সরাসরি পিআইবি থেকে নেওয়া হয়েছে

প্রধানমন্ত্রী বারাণসীতে শ্রী কাশী বিশ্বনাথ ধাম উদ্বোধন করেছেন

প্রধানমন্ত্রী বারাণসীতে শ্রী কাশী বিশ্বনাথ ধাম উদ্বোধন করেছেন


নয়াদিল্লি, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১
 
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ বারাণসীতে শ্রী কাশী বিশ্বনাথ ধাম উদ্বোধন করেছেন। তিনি কাশীর কালভৈরব মন্দির ও কাশী বিশ্বনাথ ধামে প্রার্থনা করেন। শ্রী মোদী গঙ্গায় পুণ্যস্নান করেন।
 
ভগবান কালভৈরব ‘নগর কোতওয়াল’-এর পা ছুঁয়ে প্রণাম করে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণ শুরু করেন। তিনি বলেন, ভগবান কালভৈরবের আশীর্বাদ ছাড়া বিশেষ কোনও কিছুই ঘটতে পারে না। দেশবাসীর জন্য শ্রী মোদী ভগবান কালভৈরবের আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন। পুরাণের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন মানুষ যখন কাশীতে প্রবেশ করেন, তখন তিনি সমস্ত বন্ধন থেকে মুক্ত হন। আমরা যখন এখানে এসে পৌঁছাই তখন ভগবান বিশ্বেসরার আশীর্বাদে আমাদের অন্তরাত্মায় এক অতি প্রাকৃতিক প্রাণশক্তি জাগরিত হয়। শ্রী মোদী আরও বলেন, বিশ্বনাথ ধামের নতুন এই কমপ্লেক্স বা প্রাঙ্গণ একটি চমৎকার ভবনই নয়, বরং এটি ভারতের সনাতন সংস্কৃতির প্রতীক। এটি আমাদের আধ্যাত্মিক আত্মার প্রতীক। এটি ভারতের প্রাচীনত্ব, ঐতিহ্য, ভারতের প্রাণশক্তি ও গতিময়তার প্রতীক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন কোনও একজন এখানে এসে পৌঁছান তখন তিনি কেবল আস্থার বিষয়টি দেখতে পান না, সেই সঙ্গে অতীতের গৌরবও অনুভব করেন। কিভাবে প্রাচীনত্ব ও অভিনবত্ব একত্রে জীবন্ত হয়ে উঠেছে, কিভাবে প্রাচীন প্রেরণা ভবিষ্যতের লক্ষ্যে দিশা-নির্দেশ করছে – এগুলি সবই আমরা এই কাশী বিশ্বনাথ ধাম প্রাঙ্গণে প্রাণবন্ততার সঙ্গে প্রত্যক্ষ করছি।
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে এই মন্দির এলাকা ছিল কেবল ৩ হাজার বর্গফুটের মধ্যে সীমিত। এখন তা বাড়িয়ে প্রায় ৫ লক্ষ বর্গফুট করা হয়েছে। এর ফলে, ৫০-৭৫ হাজার পুণ্যার্থী মন্দির ও মন্দির প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখতে পারবেন। প্রথমে মা গঙ্গা দর্শন ও তারপর পুণ্যস্নান সেরে পুণ্যার্থীরা সরাসরি বিশ্বনাথ ধামে যেতে পারবেন।
 
কাশীর গৌরবের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভগবান শিবের আশীর্বাদে কাশী অবিনশ্বর। চমৎকার এই মন্দির প্রাঙ্গণ নির্মাণ কাজে যুক্ত প্রত্যেক শ্রমিকের প্রতি শ্রী মোদী কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। করোনা সত্বেও তাঁরা কাজে কোনও খামতি রাখেননি। শ্রী মোদী এই নির্মাণ কাজে যুক্ত শ্রমিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁদের সংবর্ধনা দেন। কাশী বিশ্বনাথ ধাম নির্মাণ কাজে যুক্ত শ্রমিকদের সঙ্গেও তিনি মধ্যাহ্নভোজ করেন। বিশ্বনাথ ধাম নির্মাণ কাজে যুক্ত প্রত্যেক শিল্পী, ব্যক্তি, প্রশাসন এবং এখানে যাঁদের বাড়ি ছিল, তাঁদের ভূমিকার প্রশংসা করেন। কাশী বিশ্বনাথ ধাম প্রকল্পের কাজ শেষ করতে নিরলস প্রয়াস গ্রহণের জন্য শ্রী মোদী উত্তর প্রদেশ সরকার ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে অভিনন্দন জানান।
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শত্রুরা এই শহরে আক্রমণ চালিয়ে এবং তাকে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছে। এই শহর ঔরঙ্গজেবের বর্বরতা ও তার ভীতির সাক্ষী থেকেছে। এই ঔরঙ্গজেব তরোয়াল দিয়ে সভ্যতা পাল্টে দিতে ও অন্ধবিশ্বাস নিয়ে সংস্কৃতিকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু, অবশিষ্ট বিশ্বের তুলনায় দেশের এই মাটি সম্পূর্ণ অন্যরকম। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক সময় যেমন ঔরঙ্গজেব ছিল, অন্যদিকে তেমনই ছিলেন শিবাজীর মতো মহান ব্যক্তিত্ব। সালার মাসুদ যেমন এই দেশ আক্রমণে এসেছিল, তেমনই রাজা সুহেলদেবের মতো বীর যোদ্ধা তাকে ভারতের একতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। এমনকি, ব্রিটিশ শাসনকালে কাশীর মানুষ জেনেছিলেন, হেস্টিংসের সঙ্গে কি ঘটেছিল।
 
প্রধানমন্ত্রী কাশীর গুরুত্ব ও করুণার কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, কাশী কেবল কয়েকটি শব্দের বন্ধন নয়, বরং এই কাশী চেতনার উৎস। কাশী হ’ল জীবনের চেতনাস্থল। অন্যদিকে, মৃত্যুর পর বিরহ নয়, কাশী আনন্দমুখর হয়ে ওঠে। কাশী এমন এক জায়গা, যেখানে বিশ্বাসই সংস্কৃতি। কাশী হ’ল ভালোবাসার ঐতিহ্য। তিনি আরও বলেন, বারাণসী এমন একটি শহর, যেখানে জগৎগুরু শঙ্করাচার্য শ্রী ডোম রাজার শুদ্ধতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। এই অনুপ্রেরণাই শঙ্করাচার্যকে একতার বন্ধনে দেশকে একত্রিত করতে দৃঢ় সংকল্প যুগিয়েছিল। ভগবান শঙ্করের থেকে প্রেরণা নিয়ে গোস্বামী তুলসীদাস এই শহরেই অমর রামচরিত মানসের রচনা করেছিলেন। ভগবান বুদ্ধের জ্ঞানালোক প্রাপ্তি সারা বিশ্বের কাছে সারনাথ থেকেই ছড়িয়ে পড়েছিল। সমাজের কল্যাণে কবীরদাসের মতো ঋষির উৎসভূমি এই শহর। সমাজকে যখন একত্রিত করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল, তখন এই কাশী শহর সন্ত রবিদাসের নিষ্ঠার উৎস কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল।
 
শ্রী মোদী বলেন, কাশী চতুর্থ জৈন তীর্থঙ্করের ভূমি। যিনি অহিংসা ও সংযমের মূর্তপ্রতীক। চৈতন্য মহাপ্রভূ, সমর্থ গুরু রামদাস থেকে স্বামী বিবেকানন্দ, মদন মহন মালব্য এদের প্রত্যেকের কাছেই কাশীর এই পবিত্র ভূমি জ্ঞানের ও একতার মূল কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। বহু মুনি-ঋষি ও আচার্যের পবিত্র ভূমি এই কাশী। ছত্রপতি শিবাজী মহারাজও কাশীর এই পুণ্যভূমিতে এসেছিলেন। রানী লক্ষ্মীবাঈ থেকে চন্দ্রশেখর আজাদ অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামীর কাছেই কাশী ছিল কর্মভূমি। ভরতেন্দু হরিশচন্দ্র, জয়শঙ্কর প্রসাদ, মুন্সি প্রেমচাঁদ, পণ্ডিত রবিশঙ্কর ও বিসমিল্লাহ খানের মতো প্রবাদ প্রতীম ব্যক্তিরা এই পুণ্যভূমির আশীর্বাদ পেয়েছিলেন।
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাশী বিশ্বনাথ ধাম উৎসর্গীকরণ দেশকে নির্ণায়ক দিশা দেখাতে এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথে চালিত করতে সাহায্য করবে। কাশী বিশ্বনাথ ধাম প্রাঙ্গণ আমাদের সক্ষমতা ও কর্তব্যের প্রতিফলন। তিনি বলেন, দৃঢ় সংকল্প ও চিন্তাভাবনায় সমন্বয় থাকলে কোনও কিছুই অসম্ভব নয়। অকল্পনীয় বিষয়কে বাস্তবায়িত করার ক্ষমতা ভারতীয়দের মধ্যে রয়েছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জানি, তপস্যা কি বস্তু। আমরা এটাও জানি, দেশের স্বার্থে কিভাবে দিনরাত এক করে দিতে হয়। চ্যালেঞ্জ যত বড়ই হোক না কেন, ভারতীয় হিসাবে আমরা তা একজোট হয়ে মোকাবিলা করতে পারি।
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান ভারত তার হিতগৌরবকে পুনরুজ্জীবিত করছে। এই কাশী শহরেই মাতা অন্নপূর্ণা থাকতেন। এক সময় চুরি হয়ে যাওয়া মা অন্নপূর্ণার মূর্তি একদশক পর পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় শ্রী মোদী সন্তোষ প্রকাশ করেন।
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার কাছে ঈশ্বর সাধারণ মানুষের রূপে আসেন, আমার কাছে প্রত্যেক ব্যক্তিই ঈশ্বরের অঙ্গ। আমি দেশের জন্য জনগণের কাছে তিনটি প্রস্তাব রাখতে চাই, আর এগুলি হ’ল – পরিচ্ছন্নতা, উদ্ভাবন ও আত্মনির্ভর ভারতের জন্য লাগাতার প্রয়াস গ্রহণ।
 
পরিষ্কার-পরিছন্নতাকে জীবনের অঙ্গ হিসাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী নমামী গঙ্গে মিশনে সাধারণ মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময়ের দাসত্ব আমাদের আত্মবিশ্বাসে এমন আঘাত হেনেছিল যে, আমরা আমাদের সৃজনশীলতার প্রতি আস্থা হারিয়েছিলাম। আজ কয়েক হাজার বছরের পুরনো এই কাশী থেকে আমি সকল দেশবাসীর কাছে সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উদ্ভাবন, সৃজন ও অভিনব উপায়ে এই কাজ সম্পাদনের আহ্বান জানাই।
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ যে তিনটি সংকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, তা আত্মনির্ভর ভারত গঠনের প্রয়াসকে আরও নিবিড় করবে। ভারত যখন স্বাধীনতার শততম বার্ষিকী উদযাপন করবে, তখন দেশ কেমন হয়ে উঠবে – সেই লক্ষ্যেই স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষে অমৃতকালের এই সময়ে আমাদের কাজ করে যেতে হবে।   
 
 
CG/BD/SB